চট্টগ্রাম, , মঙ্গলবার, ৩০ এপ্রিল ২০২৪

আ’লীগ আবারও ক্ষমতায় এলে শতভাগ উন্নয়ন: ওবায়দুল কাদের

প্রকাশ: ২০১৮-০৯-০৯ ১২:০৮:০৯ || আপডেট: ২০১৮-০৯-০৯ ১২:০৮:০৯

বীর কন্ঠ ডেস্ক :

আগামী নির্বাচনে নৌকা প্রতীকে ভোট দিয়ে আবারও আওয়ামী লীগকে ক্ষমতায় আনার আহ্বান জানিয়েছেন ক্ষমতাসীন দলের সাধারণ সম্পাদক ও সেতুমন্ত্রী ওবায়দুল কাদের।

শনিবার আওয়ামী লীগের নির্বাচনী সফরের ট্রেনযাত্রায় উত্তরাঞ্চলের বিভিন্ন জেলার পথসভায় তিনি এ আহ্বান জানান।

মন্ত্রী বলেন, আওয়ামী লীগ আবারও ক্ষমতায় এলে দেশের শতভাগ উন্নয়ন হবে। ঘরে ঘরে বিদ্যুৎ দেওয়া হবে। শেখ হাসিনা যে প্রতিশ্রুতি দেন, তা রক্ষা করেন।

নির্বাচন বানচালে বিএনপির ষড়যন্ত্র ঐক্যবদ্ধভাবে রুখে দাঁড়ানোর আহ্বান জানিয়ে তিনি বলেন, গুজবসন্ত্রাস চালিয়ে বিএনপি দেশে বিশৃঙ্খলা সৃষ্টি করতে চায়। জনগণকে সঙ্গে নিয়ে বিএনপির সব ষড়যন্ত্রের দাঁতভাঙা জবাব দেওয়া হবে।

 

এই ট্রেনযত্রার শুরুতে রাজধানীর কমলাপুর রেলস্টেশনে সংক্ষিপ্ত বক্তৃতা করেন আওয়ামী লীগ সাধারণ সম্পাদক। এরপর সকাল ৮টায় ‘নীলসাগর এপপ্রেস’ ট্রেনে যাত্রা শুরম্ন হয়ে নীলফামারী যাওয়ার পথে টাঙ্গাইল, পাবনার ঈশ্বরদী, নাটোর, বগুড়ার সান্ত্মাহার, আক্কেলপুর, জয়পুরহাট, দিনাজপুরের বিরামপুর, ফুলবাড়ি, পার্বতীপুর ও নীলফামারীর সৈয়দপুর রেল স্টেশনে ১১টি পথসভা অনুষ্ঠিত হয়।

 

তবে নাটোরের আত্রাইয়ের আহসানগঞ্জ ও নলডাঙ্গার হাট স্টেশনে ট্রেন পৌঁছালে নেতাকর্মীরা রেললাইনের ওপর শুয়ে পড়লে এই দুটি স্থানে অনির্ধারিত পথসভা করতে হয়েছে। সবশেষে রাতে নীলফামারী জেলা সদরের শিল্পকলা একাডেমিতে কর্মীসভা অনুষ্ঠিত হয়। কমলাপুর রেলস্টেশনে রেলমন্ত্রী মুজিবুল হক আওয়ামী লীগে নেতাদের বিদায় জানান। অন্যদিকে পাবনায় ভূমিমন্ত্রী শামসুর রহমান শরীফ এবং নীলফামারীতে সংস্কৃতিমন্ত্রী আসাদুজ্জামান নূর তাদের স্বাগত জানান।

 

পথে পথে এসব পথসভায় হাজার হাজার মানুষের ভিড়ে রীতিমত জনসভায় রুপ নেয়। প্রতিটি স্থানেই ছিল নেতাকর্মী ও সাধারণ মানুষের উপচেপড়া ভিড়। বর্তমান এমপি এবং মনোনয়নপ্রত্যাশী নেতাদের শোডাউন ছিল চোখে পড়ার মতো। রেলশেস্টশনগুলোতে পথসভার আশাপাশ এলাকায়ও লোকে লোকারণ্য ছিল। এ সময় আওয়ামী লীগ সভাপতি শেখ হাসিনা, সাধারণ সম্পাদক ওবায়দুল কাদেরসহ বিভিন্ন নেতার নামে স্লোগান দেন নেতাকর্মীরা।

আগামী নির্বাচন সামনে রেখে সরকারের উন্নয়নকাজ তৃণমূলে পৌঁছে দিতে এবং দলকে শক্তিশালী করতে দেশের উত্তরাঞ্চলে এই ট্রেন সফরের আয়োজন করে ক্ষমতাসীন আওয়ামী লীগ। মূলত এর মাধ্যমেই শুরু হলো আওয়ামী লীগের নির্বাচনী সফর। আগামী ১৩ সেপ্টেম্বর লঞ্চযোগে বরিশাল ও বরগুনা এবং পরে সড়কপথে চট্টগ্রাম, কক্সবাজার, ময়মনসিংহ, কিশোরগঞ্জ ও নেত্রকোণা সফরে বের হবেন আওয়ামী লীগ নেতারা।

এসব পথসভায় ওবায়দুল কাদের বলেন, চারদিকে নৌকার গণজোয়ার দেখছি। পথসভাগুলো রীতিমত জনসভায় রুপ নিয়েছে। নৌকা মার্কায় ভোট দিলে দেশের উন্নতি হয়। সমৃদ্ধির পথে দেশ এগিয়ে যায়। বিশ্বের বুকে মর্যাদা বাড়ে। জনগণের আর্থ-সামাজিক উন্নয়ন হয়। আর বিএনপি-জামায়াত ক্ষমতায় আসা মানেই দেশের অর্থ লুপাট কওে নিজেদের ভোগবিলাস ও বিদেশে পাচার, রাষ্ট্রীয় মদদে জঙ্গিবাদ ঘটানো। কাজেই আগামী নির্বাচনে উন্নয়নের ধারাবাহিকতা ধরে রাখতে হলে সরকারের ধারাবাহিকতা প্রয়োজন। সে কারণে নৌকা মার্কায় ভোট দিয়ে আওয়ামী লীগকে ক্ষমতায় আনতে হবে।

দলীয় নেতা-কর্মীদের উদ্দেশে তিনি বলেন, দলের ভেতরে কোন্দল করবেন না। বিশৃঙ্খলা করলেই ব্যবস্থা নেওয়া হবে। স্তোগান দিয়ে দলীয় মনোনয়ন পাওয়া যাবে না। যে সবচেয়ে জনপ্রিয় ও জনগণ যাকে পছন্দ করে, তাকেই মনোনয়ন দেওয়া হবে। একটি নয়, পাঁচটি জরিপ হয়েছে। শেখ হাসিনার কাছে সবার আমলনামা রয়েছে। যারা মানুষের হৃদয়ে নাম লেখাতে জানেন না, জনগণের সঙ্গে দুর্ব্যবহার করেন, অপরাধ করেন- তারা মনোনয়ন পাবেন না। মনোনয়ন পেতে হলে জনগণের মনজয় করতে হবে। দলীয় প্রার্থীর বিরম্নদ্ধে যারা বিদ্রোহ ও বিশ্বাসঘাতকতা করবে, সঙ্গে সঙ্গে তাদের দল থেকে বহিস্কার করা হবে। অসুস্থ প্রতিযোগিতার কোনো ক্ষমা নেই।

আন্দোলন গড়ে তুলতে ব্যর্থতার দায়ে বিএনপির ‘টপ টু বটম’ নেতার পদত্যাগ করা উচিত মন্তব্য করে ওবায়দুল কাদের বলেন, বিএনপি আন্দোলন-সংগ্রামে পরাজিত হয়ে নির্বাচন বানচালের চক্রান্ত করছে। জনগণকে সঙ্গে নিয়ে বিএনপির আন্দোলন প্রতিহত করে নৌকা মার্কায় বিজয় ঘরে তুলবো।

প্রতিটি পথসভায় আওয়ামী লীগ সাধারণ সম্পাদক সবাইকে ঐক্যবদ্ধ থেকে আগামী নির্বাচনে আবারো আওয়ামী লীগকে বিজয়ী করার আহ্বান জানান। নেতাকর্মী ও সাধারণ মানুষ দু’হাত তুলে সেই প্রতিশ্রম্নতি দেন।

টাঙ্গাইল রেল স্টেশনের প্রথম পথসভায় নেতাকর্মীদের সতর্ক করে কাদের বলেন, দলের মধ্যে বিশৃঙ্খলাকারীদের বিরুদ্ধ অ্যাকশন শুরু হয়ে গেছে। তিনদিনের মধ্যেই শোকজ যাবে। দিনাজপুর, রাজশাহী, বরগুনা ও সিলেট যাবে। তাই ঘরের মধ্যে ঘর বানানোর চেষ্টা করবেন না। মশারির মধ্যে মশারি টানানোর চেষ্টা করবেন না। শেখ হাসিনার অ্যাকশন ডাইরেক্ট অ্যাকশন। উপস্থিত সাধারণ মানুষের দাবির প্রেক্ষিতে ঢাকা-টাঙ্গাইল অফিসগামী ট্রেন চালুর প্রতিশ্রুতি দেন সেতুমন্ত্রী।

পাবনার ঈশ্বরদীর মুলাডুলি রেলস্টেশনে পথসভায় ওবায়দুল কাদের বলেন, ২০১৪ সালের মত বিএনপি-জামায়াত আগামী নির্বাচনেও নাশকতার চেষ্টা করলে প্রতিহত করা হবে। উন্নয়নের বাংলাদেশে কোনো নাশকতা চলতে দেওয়া হবে না। আর উন্নয়নের ধারা অব্যাহত রাখতে আওয়ামী লীগকে আবারও ক্ষমতায় আনতে হবে। এজন্য নৌকা মার্কায় ভোট দিতে হবে। সরকার ও দলের ভুলত্রুটি সংশোধনের চেষ্টা চলছে বলে জানান তিনি।

নাটোর রেলস্টেশনে কাদের বলেন, বিএনপির এমন কোনো কাজ আছে, যে তারা ভোট চাইতে পারে? দেশে উন্নয়ন অগ্রগতির এমন কী আছে, যা দেখে বিএনপিকে মানুষ ভোট দেবে? কিছুই নাই।

বিএনপি মহাসচিব মির্জা ফখরুলের সমালোচনা করে তিনি বলেন, মির্জা ফখরল বলেছেন আওয়ামী লীগের নাকি ভোট কমেছে। শেখ হাসিনার ইতিবাচক রাজনীতিতে আওয়ামী লীগের ভোট বরং বেড়েছে। আর বিএনপির নেতিবাচক রাজনীতিতে তাদের ভোট কমে গেছে।সেতুমন্ত্রী বলেন, ১০ বছরে ১০ মিনিটের জন্যও বিএনপি রাস্তায় নামতে পারেনি। ভেবেছিল খালেদা জিয়া জেলে যাওয়ার পর সাগরের উত্তাল নামবে। কিন্তু নদীর ঢেউও হলো না। বিএনপির আন্দোলনের মরা গাঙ্গে জোয়ার আর আসে না, আসবে না।

বগুড়ার সান্তাহার, জয়পুরহাটের আক্কেলপুর ও জয়পুরহাট সদরের পথসভায় তিনি বলেন, দেশবাসীকে সতর্ক থাকতে হবে। কারণ আগামীতে বিএনপি ক্ষমতায় এলে ২০০১ সালের চেয়েও ভয়াবহ পরিস্থিতি তৈরি হবে। কেউ নিরাপদ থাকবে না।

তিনি বলেন, নৌকার পালে সুবাতাস বইছে। সংসদ নির্বাচন সামনে রেখে কেন্দ্র ভিত্তিক কমিটি গঠন ও উঠান বৈঠক করার নিদের্শ দেন তিনি। তরুণ ও নারী ভোটাররাই আগামী নির্বাচনে আওয়ামী লীগের বিজয়ের হাতিয়ার হবে বলে মন্তব্য করেন তিনি।

এদিকে, সকালে ট্রেনযাত্রার শুরম্নতে কমলাপুর রেলস্টেশনে ওবায়দুল কাদের বলেন, এই যাত্রা আওয়ামী লীগের নির্বাচনী যাত্রা। এই যাত্রা অব্যাহত থাকবে। প্রধানমন্ত্রী শেখ হাসিনার উন্নয়নবার্তা তৃণমূলে পৌঁছে দিতেই এই নির্বাচনী সফর। তৃণমূলের মানুষ যাতে বিএনপি-জামায়াতের গুজবের রাজনীতি বিষয়ে সচেতন হন, সে বিষয়েও দলের এই সাংগঠিক কার্যক্রম গুরুত্বপূর্ণ ভূমিকা রাখবে।

আওয়ামী লীগ সাধারণ সম্পাদক ওবায়দুল কাদেরের নেতৃত্বে নির্বাচনী এই ট্রেনসফরে দলের কেন্দ্রীয় নেতাদের মধ্যে জাহাঙ্গীর কবির নানক, আহমদ হোসেন, বিএম মোজাম্মেল হক, খালিদ মাহমুদ চৌধুরী, আবু সাঈদ আল মাহমুদ স্বপন, ড. হাছান মাহমুদ, অসীম কুমার উকিল ও ব্যারিস্টার বিপ্লব বড়ুয়া উপস্থিত ছিলেন।

Leave a Reply

Your email address will not be published. Required fields are marked *