আলাউদ্দিন ডেস্ক কন্ট্রিবিউটর
প্রকাশ: ২০১৮-০৯-১৭ ১৫:৪৭:১৮ || আপডেট: ২০১৮-০৯-১৭ ১৫:৪৯:১০
বীর কন্ঠ ডেস্ক :
বাবা-মা রয়েছেন হজ্বে। আর এরই মধ্যে প্রাইভেট পড়তে গিয়ে নিখোজ হয় সেই বাবা-মায়ের আদরের সন্তান ও ৮ম শ্রেনীর ছাত্রী তাসনিম সুলতানা তুহিন (১৩)। অবশেষে হাটহাজারীর শাহজালাল পাড়ার একটি ভবন থেকে নিখোজের দুই দিন পর রোববার দিবাগত রাত সাড়ে ৯টার দিকে একই ভবনের অপর ঘরের সোফার নীচ থেকে উদ্ধার করা হয়েছে প্লাস্টিকের ব্যাগে মোড়ানো তুহিনের গলিত লাশ। তার কথিত প্রেমিক মুন্নাকেও আটক করেছে পুলিশ।
স্কুল ছাত্রী তুহিনকে নৃশংসভাবে হত্যার পর সোফার নীচে প্লাষ্টিকের প্যাকেটে মুড়িয়ে রাখা হয়। এই হত্যাকান্ডের সাথে জড়িত সন্দেহে শাহানেওয়াজ মুন্না নামে এক যুবককে আটকের পর তার দেখানো মতেই রোববার রাত সাড়ে ৯টার দিকে লাশটি উদ্ধার করা হয় বলে জানিয়েছে পুলিশ।
হাটহাজারী সার্কেল এর অতিরিক্ত পুলিশ সুপার আবদল্লাহ আল মাসুম জানিয়েছেন, ঘটনার সাথে মুন্না জড়িত বলে মনে হচ্ছে। তার দেখানো মতেই স্কুল ছাত্রীর লাশ পাওয়া গেছে। ঘটনার সাথে প্রেমের সংশ্লিষ্টতা আছে বলে প্রাথমিকভাবে ধারনা করা হচ্ছে। হতে পারে প্রেমে সাড়া দেয়নি, কিংবা প্রেম ছিল। মুন্নার ঘরের লোকজনও টের পায়নি কখন তুহিনকে কখন মেরে সোফাসেটের নীচে লুকিয়ে রাখা হয়েছে। এটা রহস্যজনক বলে মনে করছে পুলিশ।
স্কুলছাত্রী তুহিন ফটিকা গ্রামের সালাম ম্যানশন নামে ওই ভবনের মালিক উপজেলার গড়দুয়ারা ইউনিয়নের নেয়ামত আলী সারাং বাড়ির আবু তৈয়বের কন্যা এবং হাটহাজারী গার্লস হাইস্কুল এ- কলেজের ৮ম শ্রেণির ছাত্রী।
শুক্রবার সন্ধ্যায় ঘর থেকে প্রাইভেট পড়তে গিয়ে নিখোজ হয় তুহিন। এই ঘটনায় রোববার সন্ধ্যায় পৌর এলাকা থেকে থানা পুলিশ শাহানেওয়াজ মুন্না নামে এক বখাটে যুবককে আটক করে। ওই যুবকের স্বীকারোক্তি মোতাবেক রাত সাড়ে ৯টার দিকে পুলিশ তার (তুহিন) লাশটি উদ্ধার করে থানায় নিয়ে আসে।
দীর্ঘদিন যাবৎ শাহানেওয়াজ মুন্নার পরিবার পৌর এলাকার শাহাজালাল পাড়ার সালাম ম্যানশনের চতুর্থ তলার ফ্ল্যাটে ভাড়ায় থাকত। শাহানেওয়াজ মুন্না ছাত্র রাজনীতির বাইরে থেকে ইয়াবাসহ বিভিন্ন ধরণের মাদক সেবন ও বিক্রির সঙ্গে সম্পৃক্ত ছিল বলে স্থানীয়রা জানিয়েছে।
এদিকে পুলিশ ঘটনাস্থল থেকে লাশটি উদ্ধার করে থানায় নিয়ে আসে। লাশের সুরতহাল প্রতিবেদন তৈরি করে ময়নাতদন্তের জন্য লাশ মর্গে প্রেরণের জন্য পাঠানো হয়েছে বলে পুলিশ জানিয়েছে।
রাত ১০ টার দিকে ঘটনাস্থল থেকে কান্না জড়িত কণ্ঠে তুহিনের ছোট মামা মো. সাইফুল ইসলাম জানান, তার (তুহিন) পিতা-মাতা হজ পালনের জন্য বর্তমানে সৌদিআরব অবস্থান করছেন। গত শুক্রবার সন্ধ্যায় প্রাইভেট শিক্ষক তুহিনকে পড়াতে আসেন। এ সময় ভবনের নিচ তলা থেকে ২য় তলায় পড়তে যাওয়ার কথা থাকলেও সে যায়নি। পরে অনেক খোঁজাখুজি করে তাকে পাওয়া যায়নি। পরে ওই দিন সন্ধ্যায় এ ঘটনায় থানায় ডায়েরি করা হয়।
এ ব্যাপারে জানতে চাইলে হাটহাজারী মডেল থানার পুলিশ পরিদর্শক বেলাল উদ্দীন জাহাংগীর জানান, এ বিষয়ে থানায় একটি নিখোঁজ ডায়েরি হওয়ার পর রোববার পৌর এলাকা থেকে মুন্না নামে এক যুবককে আটক করা হয়। তার স্বীকারোক্তি মোতাবেক পৌর এলাকার শাহজালাল পাড়ার সালাম ম্যানশনের চতুর্থ তলার একটি ফ্ল্যাটের ড্রয়িং রুমের একটি সোফা সেটের নিচে প্লাস্টিক মোড়ানো অবস্থায় তুহিনের গলিত লাশটি উদ্ধার করি।
ঘটনাটিকে পরিকল্পিত হত্যাকা- বলে মনে করছে পুলিশ। গ্রেফতারকৃত মুন্না এরসাথে জড়িত। তবে কেন কী কারণে ওই যুবক এ ঘটনা ঘটিয়েছে তা খতিয়ে দেখা হচ্ছে। এছাড়া ঘটনায় ওই ছাত্রীর পরিবারের পক্ষ থেকে একটি হত্যা মামলা দায়ের করা হচ্ছে বলেও পুলিশ জানায়।
এদিকে আগামী বুধবার তুহিনের পিতা-মাতা হজ পালন শেষে দেশে ফিরে আসার কথা রয়েছে জানিয়েছেন তুহিনের চাচা গড়দুয়ারা ২ নং ওয়ার্ডের ইউপি সদস্য হাজী আবুল মনসুর। তিনি জানান, ভাই-ভাবী হজ শেষে বাড়ি ফিরলে তাদের প্রাণের প্রিয় কন্যা তুহিনকে আমরা কিভাবে ফিরিয়ে দিব?