ওমর ফারুক লেখক/কলামিস্ট
প্রকাশ: ২০১৮-১০-০১ ২০:৪৬:১২ || আপডেট: ২০১৮-১০-০১ ২০:৪৬:১২
চট্টগ্রামের উপকূলীয় উপজেলা বাঁশখালীতে তিনটি দৃষ্টি নন্দন সমুদ্র সৈকত আছে। গন্ডামারা ও বাহারছড়া সমুদ্র সৈকতে কয়েকবার গেলেও খানখানাবাদ সমুদ্র সৈকতে যাওয়া হয়নি। কিছুদিন আগে একজনের লেখা পড়ে সিদ্ধান্ত নিয়েছিলাম এই ঈদে খানখানাবাদ দেখে আসতে হবে।
কোথাও যাওয়ার পোকা মাথায় একবার ঢুকলে ঐ জায়গায় না যাওয়া অবধি পোকা বের করা যায় না। তাই পাঁচ বন্ধু মিলে ঈদের পরের দিন খানখানাবাদ যাওয়ার প্লান করি। সেই আলোকে আজকে দুপুরে খেয়েদেয়ে দুইটার দিকে মোটরসাইকেলে রওনা দেই। পেকুয়া থেকে ঘন্টা দেড়েক গাড়ি চালানোর পর প্রতীক্ষিত খানখানাবাদে পৌঁছে যাই। মাঝে ঝিরিঝিরি বৃষ্টির ফোঁটা কয়েকবার যাত্রাপথে হানা দিলেও আমাদের কাছে তেমন পাত্তা পায়নি। খাসমহল গুনাগরি থেকে মাত্র সাত কিলো পিচঢালা পথ ধরে আগালেই কাংখিত সমুদ্র সৈকতের দেখা পাই।
১৯৯১ সালের প্রলয়ংকারী ঘূর্ণিঝড়ে বাঁশখালীর যে ক’টা ইউনিয়ন সবচেয়ে বেশি ক্ষতিগ্রস্ত হয়েছিল খানখানাবাদ তার একটি। খানখানাবাদ বলতে মাথায় আসে সেই ঘূর্ণিঝড়ের ভয়াবহ তান্ডবের গল্প। কিন্তু আজকে পৌঁছে প্রথমে চোখে পড়ে সারি সারি ব্লক দিয়ে বানানো বেঁড়িবাধ। খানখানাবাদকে এখন অনেক সুরক্ষিত মনে হলো। যতদূর হাঁটি ব্লক আর ব্লক! অন্যরকম সৌন্দর্যের সন্নিবেশ ঘটানো সেই ব্লকে বসলে শো শো করে বয়ে চলা বাতাসের দমকা হাওয়া শরীরে স্বর্গীয় আবেশ ও অনুভূতি নিয়ে আসে। ব্লক ধরে দক্ষিণে গেলেও ঝাউবন, উত্তরেও ঝাউবন।
আমরা যখন যাই তখন ভাটা ছিলো। সামনে ভাটায় জেগে উঠা বিস্তীর্ণ বালুকাময় সৈকত। বালি কণায় কিশোরদের ফুটবল খেলা একদা যাপন করা আমাদের শৈশবের কথা মনে করিয়ে দেয়। এমন একটা দুর্দান্ত শৈশব একদিন আমাদেরও ছিলো বলে একটা আক্ষেপ, একটা হাহাকার আনমনে সমুদ্র সমর্পনে উগরে দেই।
আকাশ মেঘাচ্ছন্ন ছিলো। দূরে বর্হি নোঙ্গরে থাকা সারি সারি দানব আকারের জাহাজ। মেঘের লুকোচুরির ফাঁক গলে সূর্যের উঁকিঝুঁকি এবং জাহাজের দেখা মিললেই আনমনে মোবাইলের ক্যামেরায় হাত পড়ে। বিস্তীর্ণ বিচে সাইকেল চালিয়ে কিছু সময়ের জন্য শৈশবে ফিরে গেছিলাম। বিচে লাল কাঁকড়ার পেছনে দৌড়াতে দৌড়াতে ছোটবেলায় চোর পুলিশ খেলার কথা মনে পড়ে গেছিল।
পরিস্কার ও ঝকঝকে একটা সমুদ্র সৈকত খানখানাবাদ। ঐখানকার মানুষগুলোকে আন্তরিক ও পর্যটক বান্ধব মনে হয়েছে। সৈকতটি এখনো মানুষের রোষানলে পড়েনি। চিপসের প্যাকেট ও পানির খালি বোতল একটাও না দেখে ভালো লেগেছে। একটা বিকেল একান্তে বেচে দেওয়ার অসাধারণ হাটবাজার এই খানখানাবাদ বিচ।
কিভাবে যাবেনঃ চট্টগ্রামের নতুন ব্রিজ কাউন্টার থেকে এভেইলেবল বাঁশখালীর বাস পাওয়া যায়। দুইঘন্টা বাসে যাওয়ার পর গুনাগরি খাসমহলে নেমে যেতে হবে। সেখান থেকে সিএনজি করে ইজিলি তিশ চল্লিশ মিনিটেই বিচে পৌছানো যাবে।
লেখক :ওমর ফারুক
সহকারী শিক্ষা কর্মকর্তা
লোহাগাড়া, চট্টগ্রাম