চট্টগ্রাম, , সোমবার, ৬ মে ২০২৪

এস. এম. রাশেদ চন্দনাইশ প্রতিনিধি

চট্টগ্রাম-দোহাজারী রেললাইনে যুক্ত হচ্ছে আরেকটি লোকাল ট্রেন :উদ্বোধন করবেন রেলমন্ত্রি,পরিদর্শনে এমপি নজরুল

প্রকাশ: ২০১৮-১১-০১ ১৭:২৬:২৭ || আপডেট: ২০১৮-১১-০১ ১৭:২৬:২৭

 

এসএম রাশেদ, চন্দনাইশ :

চট্টগ্রাম- দোহাজারী এক সময়ের প্রাণচাঞ্চল্য লাভজনক শাখা লাইটিতে ৬ জোড়া ট্রেনের মধ্যে ১জোড়া ট্রেন চলচলাচল স্বচল রেখে বাকী ৫ জোড়া ট্রেন বন্ধ হওয়ার দীর্ঘ দেড় যুগ পর ৩ নভেম্বর নতুন করে আরেকটি লোকাল ট্রেন যুক্ত হয়ে ২ জোড়া ট্রেন চলাচল করবে বলে রেলওয়ে সংশ্লিষ্ট সূত্রে জানা যায়। নতুন লোকাল ট্রেনটি উদ্বোধনে আগামী ৩ নভেম্বর আসার কথা রয়েছে বাংলাদেশ সরকারের রেলমন্ত্রি আলহাজ্ব মুজিবুল হক চুন্নু। তিনি প্রথমে পটিয়া রেল ষ্টেশন পরিদর্শন ও আলোচনাসভা শেষে দোহাজারী রেল ষ্টেশনে বিকালে এসে আনুষ্ঠানিক উদ্বোধন করবেন বলে দোহাজারী সহকারী ষ্টেশন মাষ্টার আতিকুল ইসলাম নিশ্চিত করেছেন। এ উপলক্ষে ১ নভেম্বর দুপুরে চট্টগ্রাম-১৪ আসনের সাংসদ আলহাজ্ব নজরুল ইসলাম চৌধুরী দোহাজারী রেলষ্টেশন পরিদর্শন করেন এবং রেলের সংশ্লিষ্ট কর্মকর্তাদেরকে ভালভাবে ট্রেন যাত্রায়তে যাত্রীদের সুযোগ সুবিধা যেন ক্রুটি না সে ব্যাপারে সজাগ থাকার আহবান জানান। এসময় তার সাথে উপস্থিত ছিলেন, মরহুম আবুল কাশেম লেদু ফাউন্ডেশনের সভাপতি ও যুবলীগ নেতা আলহাজ্ব লোকমান হাকিম, দোহাজারী আ’লীগের সভাপতি আবদুর শুক্কুর, সাবেক ইউপি সদস্য শাহা আলম, জামাল উদ্দীন,ইস্কান্দর মিয়া,যুবলীগ নেতা সাইফুল ইসলাম সুমন, আলহাজ্ব জসীম উদ্দীন হিরু,জাহাঙ্গীর আলমসহ স্থানীয় নেতৃবৃন্দ। ৩ নভেম্বর নতুন এক জোড়া ট্রেন চালু হবে তা সকাল ১১টায় চট্টগ্রাম থেকে রওনা দেবে ঝাউতলা,চট্টগ্রাম পলিঃ, ষোলশহর জংশন, জানালীহাট,গোমদন্ডী, ভেঙ্গুরা,ধলঘাট,খানমোহনা,পটিয়া,চক্রশালা,খরনা, কাঞ্চননগর,খানহাট,হাশিমপুর হয়ে দোহাজারীতে পৌঁছবে দুপুর ২টায়। বিকাল ৩টায় দোহাজারী থেকে ট্রেনটি ছেড়ে গিয়ে আবারো ১৬টি ষ্টেশনে যাত্রী উঠানামা করে চট্টগ্রামে পৌঁছবে সন্ধ্যা ৬টায়। আগের জোড়া ট্রেন চট্টগ্রাম থেকে ৬টায় রওরা দিত দোহাজারী পৌছত রাত ৯টায়, আবার দোহাজারী থেকে ৫টা ৪০মিঃ ছাড়লে চট্টগ্রামে পৌছত ৮টা ৪০ মিনিটে। বর্তমানে দু-জোড়া ট্রেন চালু হওয়াতে সময়ের পরিবর্তন করে  তা ১ঘন্ট বাড়িয়ে চট্টগ্রাম থেকে সন্ধ্যা ৭টায় ট্রেনটি রওনা দিবে পৌঁছবে রাত ১০টায়। আবার সকালে ছাড়বে ৬টা ৪০ মিনিটে চট্টগ্রামে পৌঁছবে ৯টা ৪০মিনিটে। তবে ১১১ ও ১১৪ নং লোকাল ট্রেন ২টি শুক্রবার র্সাভিসিং এর জন্য সপ্তাহিক বন্ধ থাকবে বলেও জানা যায়। তবে এ ট্রেনটি চালু হচ্ছে শুনে দক্ষিণ চট্টগ্রামের যাত্রীরা আনন্দিত হয়েছেন। তারা মনে করছেন ট্রেনটি চালু হওয়াতে যাত্রায়তে অনেকটা দুঃখ লাগব হবে।

জানাযায়,তৎকালীন সরকার ১৯৫০ সালের দিকে দোহাজারী-চট্টগ্রাম শাখা রেল লাইনটি চালু করেন। চালুর পর থেকেই এই শাখা লাইনটি একটি লাভজনক রেললাইনে পরিণত হয়। তখন দিনে ৬ জোড়া ট্রেন চলাচল করতো। স্বাধীনতার পর এই লাইনটিতে শুরু হয় রেলের কর্মকর্তা কর্মচারীদের অব্যাহত লুটপাট। কর্মকর্তা কর্মচারীদের লুটপাটের সাথে যোগ দেয় রেললাইন সংলগ্ন এলাকাগুলোর চিহ্নিত ভূমিদস্যু ও দুষ্কৃতিকারী। দীর্ঘ সময় লুটপাটের কারণে লাভজনক এই শাখা লাইনটি দ্রুত লোকসানী লাইনে পরিণত হয়েছিল। লোকসানের ঘ্রানি টানতে টানতে এক পর্যায়ে রেলওয়ে কর্তৃপক্ষ এই শাখা লাইনটিতে সবকটি রেল চলাচল বন্ধ করে দেয়। রহস্যজনক কারণে রাতে চলাচলের জন্য মাত্র ১ জোড়া ট্রেন চালু রেখেছিল কর্তৃপক্ষ। যে ১ জোড়া ট্রেন চালু ছিল সেটির দরজা, জানালা, লাইট, ফ্যান এমনকি সিট পর্যন্ত খুলে নিয়েগেছিল চোরের দল। এই রুটের ১৩ রেল স্টেশনে টিকেট বিক্রি বা কোন কর্মকর্তার দেখা পাওয়া যেত না। সে সময়ে চট্টগ্রাম-দোহাজারী রেল লাইনে স্লিপার, পাথরসহ আনুষঙ্গিক যন্ত্রপাতি ছাড়াই অত্যন্ত ঝুঁকি নিয়ে ট্রেনটি চলাচল করছিল। ঝুঁকির নিয়ে চলাচলের কারণে কয়েকমাস অন্তর অন্তর এ শাখা লাইনটিতে ট্রেনের ইঞ্জিনসহ বগি লাইনচ্যুত হত।  তবে হতাহতের কোন ঘটনার খবর পাওয়া যায়নি।

চট্টগ্রাম-দোহাজারী এ রেল লাইনে বন্ধ হয়ে যাওয়া ১৩টি স্টেশন ভবনের প্রতিটির দরজা, জানালা, আসবাবপত্রসহ বৈদ্যুতিক সরঞ্জাম চুরি করে নিয়ে গিয়েছিল চোরের দল। যে স্টেশনগুলোতে দু’টি রেললাইন স্থাপন করা হয়েছিল সেখানকার একটি রেলবিট কেটে নিয়ে গেছিল। অধিকাংশ এলাকায় খুলে নিয়ে গেছিল রেল লাইনের নাট বল্টু, স্লিপারসহ অন্যান্য যন্ত্রাংশ। স্টেশনগুলো পরিণত হয়েছিল অসামাজিক কার্যকলাপের আখড়ায়। রেল কর্তৃপক্ষের উদাসীনতার কারণে চুরি হয়ে যায় কোটি কোটি টাকা মূল্যের যন্ত্রাংশ, বেহাত হয়েছিল বিপুল পরিমাণ সম্পত্তি। যে একটি ট্রেন চালু ছিল তাতে সাধারণ মানুষের যাতায়াত নেই বললেই চলত। ট্রেন চলাচল বন্ধ ঘোষণা করার পর থেকে এই লাইনের ১১টি স্টেশনের অনেকগুলো থেকে কর্মকর্তা কর্মচারীদেরও প্রত্যাহার করে নেয়া হয়েছিল বলেও জানা যায়। ফলে ৪৫ কিলোমিটার দীর্ঘ এই রেললাইনটি হয়ে পড়েছিল অরক্ষিত এবং স্টেশন ভবনগুলো পরিণত হয়েছিল মাদকসেবী ও জুয়াড়িদের আস্তানায়। মাননীয় প্রধানমন্ত্রি শেখহাসিনা যখন চট্টগ্রাম-কক্সবাজার ঘুমদুম পযন্ত রেল লাইন স্থাপনের সিদ্ধান্ত নেন তখন থেকে রেল লাইনও ষ্টেশনগুলির পরিবর্তন আসে। এডিবি ও বাংলাদেশ সরকারের অর্থায়নে ১৮হাজার ৩৪ কোটি ৪৮লাখ টাকা ব্যায়ে ভায়া ঘুমদুম পর্যন্ত ১২৯ কিলোমিটার ডুয়েলগেজ রেলপথের এই প্রকল্প বাস্তবায়ন করা হবে। দোহাজারী-কক্সবাজার ১০১ কিলোমিটার রেলপথ নিমার্ণ প্রকল্পের প্রথম দোহাজারী-রামু রেলপথ নিমার্ণকাজ শুরু হয়েছে। যা বর্তমানে দ্রুত গতিতে এগিয়ে চলছে।

Leave a Reply

Your email address will not be published. Required fields are marked *