চট্টগ্রাম, , বুধবার, ২৪ এপ্রিল ২০২৪

ওমর ফারুক লেখক/কলামিস্ট

শিক্ষা-পাগল এক গ্রামের গল্প 

প্রকাশ: ২০১৮-১১-০১ ১৭:৪৩:৪৩ || আপডেট: ২০১৮-১১-০১ ১৭:৪৩:৪৩

ওমর ফারুক:

চুনতি অভয়ারণ্যের দুই পাহাড়ের উপত্যকায় মিরিখিল গ্রাম। দূরের পাহাড় থেকে থেমে থেমে শোনা যাচ্ছিল খেঁকশিয়ালের ডাক। এমন পাহাড়ের কোলে বেড়ে উঠা গ্রামে দিনের বেলা যেখানে দশ মানুষের জটলা দেখা অকল্পনীয়, সেখানে রাত দশটায় বিদ্যালয়ের ভিত্তিপ্রস্তর অনুষ্ঠানে লোহাগাড়ার উপজেলা নির্বাহী অফিসার জনাব আবু আসলাম, সহকারী কমিশনার (ভূমি) জনাব পদ্মাসন সিংহ, সহকারী শিক্ষা কর্মকর্তা জনাব ওমর ফারুক ও জনাব মুসলিম উদ্দিন, অধ্যাপক মোহাম্মদ ইলিয়াছ, ইউপি চেয়ারম্যান জয়নুল আবেদীন, বীর মুক্তিযোদ্ধা রফিক দিদার, বিভিন্ন শিক্ষা প্রতিষ্ঠানের সম্মানিত শিক্ষক, ইউপি মেম্বার থেকে শুরু করে কে উপস্থিত ছিলো না? ঘন কুয়াশা ও তীব্র অন্ধকার ভেদ করে জ্বলে উঠা জেনারেটরের আলোই যেন জানান দিচ্ছিল আগামীর আলোর ঝলকানি।

প্রত্যন্ত গ্রামে মাঝরাতে সেদিন এত গণ্যমান্য মানুষের উপস্থিতি এবং জেনারেটরের আলোর ঝলকানি সম্ভব হয়েছিল শিক্ষা-পাগল এক গ্রাম মানুষের ঐকান্তিক প্রচেষ্টায়।

জানা যায় মিরিখিল গ্রাম থেকে পাশ্ববর্তী বিদ্যালয়ের দূরত্ব পাঁচ কিলোমিটার। পাহাড়ের টিলা থেকে এত দূরে স্কুলে গিয়ে শিশুদের বিদ্যা অর্জন করা দুরহ এক কাজ। ভোরের আলো দেখার আগে যেমন শিউলি ফুল ঝরে যায়, তেমনি প্রাথমিক শেষ করার আগেই ঝরে যায় মিরিখিলের অনেক শিক্ষার্থী-ফুল। শিশুদের শিক্ষা থেকে এই অকালে ঝরেপড়া মিরিখিলবাসীকে ভাবায়, কপালে পড়ে তাদের চিন্তার দীর্ঘ ভাঁজ।

 

আধুনগরের কুলপাগলী এলাকার শিক্ষা-পাগল নুরুল কবিরকে নিয়ে মিরিখিলবাসী চলে আসে উপজেলা সদর দপ্তরে। একটা শিক্ষাপ্রতিষ্ঠানের অভাবে শিক্ষার্থীদের এভাবে অকালে ঝরে পড়ার কথা শুনে উপজেলা নির্বাহী অফিসার আবু আসলাম তাঁর সম্ভব সহযোগিতার ঝাঁপি নিয়ে এগিয়ে আসেন। সহযোগিতার হাত বাড়িয়ে দেওয়ার আশ্বাস দেয় উপজেলা শিক্ষা অফিস, উপজেলা ভূমি অফিসও।

 

বর্তমান ভোগ-সংস্কৃতির সময়ে মানুষ যেখানে দুই টাকার ভাগবাটোয়ারার জন্য মারামারি শুরু করে দেয়, সেখানে শিক্ষার জন্য ত্রিশ শতক জায়গা এগিয়ে আসে শিক্ষা থেকে মাঝপথে দিক হারানো ঐ গ্রামের সোলতান আহমেদের সন্তানেরা।

 

স্কুল ঘর তৈরি করার জন্য ইউএনও ইট ও কংক্রিট দেন। আনোয়ার কামাল চৌধুরী ইট, ইউপি চেয়ারম্যান টিন, মিরিখিলের কেউ গাছ, কেউ সিমেন্ট, কেউ বালি এমনকি কেউ স্বেচ্ছা শ্রম নিয়ে স্কুল প্রতিষ্ঠায় এগিয়ে আসে।

 

বিদ্যালয়ের জন্য এক গ্রাম মানুষের রাতজাগা আমাদেরকে মুগ্ধ করে, আশান্বিত করে।

 

মিরিখিলে আলো আসবেই।

লেখক :

সহকারী উপজেলা শিক্ষা অফিসার

লোহাগাড়া, চট্টগ্রাম।

Leave a Reply

Your email address will not be published. Required fields are marked *