মুরুং এর নাম মনে নাই। তাহার থেকে জিজ্ঞাসা করি তুমি মানুর বাড়ী কোন দিকে আছে? সে বলে কুয়ান ঝিরি বড় মুরুং পাড়া আছে। সামনে আগাইলাম। একটি জুমের বাসায় গিয়া পৌঁছি। তখন বাসাতে হারাধন ও লাল মোহন ডুলাহাজারা আমরা ৭ জন একত্রিত হয়ে পরামর্শ করি কুয়ান ঝিরি যাওয়ার জন্য। অনুমান সময় সকাল ১০ ঘটিকা। পাহাড় পর্বত অতিক্রম করিয়া বিকাল ৫ঘটিকার সময় কুয়ান ঝিরি পৌঁছে যায়। জাফর ভাই ও শমশু ভাই বয়সে বড়। জাফর ভাই আমাদের সাথি মুরুং এর মাধ্যমে রোয়াজাকে ডাকিয়া নিয়া খাওয়া দাওয়ার ব্যবস্থা করেন। রোয়াজা একটি মুরগ ও দুই সের চাউল, দুইটি রান্নার ডেক, মরিচ, লবণ, কাঠ ইত্যাদি সামগ্রী দিয়াছিল। মাগরিবের পর রান্না শেষ করার পর রোয়াজাকে ডাকিয়া শীতের কাঁথা ব্যবস্থা করিতে বলেন। ৪টি পোজান ও ২টি বিছানা আনিয়া দিয়াছিল। রাত্রে খাওয়া-দাওয়ার পর জাফর ও মিলন বলেন আমরা মেজর সাহেবের সাথে দেখা করব না। আমরা আপনাকে কমন্ডার নির্বাচিত করিলাম। আপনি যাই বলেন, তাই আমরা শুনব। আমি বললাম, কমন্ডারির দরকার নেই, আমি দক্ষিণ দিকে যাব না। উদিকে পুরুইক্যা আছে। রাতে আগের মত ২ ঘন্টা করে ডিউটি করিয়া রাত যাপন করিয়াছিলাম। জাফর ভাই সকাল হইলে রোয়াজাকে ডাকিয়া আনিয়া খাওয়া দাওয়ার ব্যবস্থা করিতে বলেন। রোয়াজা তখন একটি মুরগি ও দুই সের চাউল অন্যান্য সামগ্রী নিয়ে আসেন। তখন রোয়াজাকে চাউলের টাকা ও মুরগের টাকা দিয়া ফেলি। খাওয়া দাওয়ার পর আমরা ১০টার দিকে মেজর সোবহান সাহেবের সাথে সাক্ষাৎ করিতে বাহির হই। তখন জাফর ভাই বলেন দক্ষিণ দিকে যাওয়ার জন্য। আমি বললাম। দক্ষিণ দিকে যাব না। জাফর ভাই বললেন গুলিগুলো আমাদেরকে দিয়ে দাও। আমি বললাম আমার গুলি আমি দেব না। আমার লাগবে। অন্য তিনজন শামশু, হারাধন, লাল মোহন হইতে গুলিগুলি নিয়াছিল। আমার প্রতিপক্ষ তিনজন কানে কানে কথা বলে, রাইফেল কাক করে আমার দিকে এগিয়ে আসে। আমিও তখন রাইফেল কাক করি। পাড়ার পুরুষ-মহিলারা ভয়ে ছড়াতে পড়ে যায়। জাফর সুঠাম দেহের অধিকারী হওয়াতে সে আমার কাছ থেকে রাইফেল কেড়ে নেয়। তখন আমি কন্দন করিতেছিলাম। আমি তাহাকে বললাম, তুমি আমার রাইফেল নিয়েছ বাঁচতে পারবে না। তোমাকে আমি গুলি করব। তখন কেদে কেদে পাহাড়ের চূড়ায় উঠিলাম। আমার সহযোদ্ধা লাল মোহন দাড়াইতে বলে আমি দাড়াইলাম। তার সাথে আমরা যাব। তাকে মেরে আমরা অস্ত্র নিয়ে চলে আসব। ২য় বন্ধু হারাধন সেও আসল। সে বলল আমরা তার সাথে যাই অস্ত্রগুলো নিয়ে আসার চেষ্টা করি। আমি বললাম সে ডাকাত। সে কোন জায়গা নিয়ে আমাদেরকে মেরে ফেলবে এবং অস্ত্রগুলি নিয়ে যাবে। আমি হাটা ধরলাম। আমার পিছনে পিছনে নতুন একটা পথ দিয়ে চললাম। কিছু দুর গিয়ে ছড়ায় নামি। ছড়ায় এক হাটু পানি। দুই পাশে দুইটি মাটির দেওয়াল ছাড়া সমতল জায়গা নেই। আনুমানিক ১২ টার দিকে আরেকটি ছড়ায় পড়ি। সেখানে দেখা যায় অসংখ্য পায়ের জুতার চাপ। মনে হয় হানাদার ও রাজাকার এই পথে আসিয়াছিল। এই ছড়া থেকে পাহাড়ের উপরদিকে উঠতে থাকি। নিচের দিকে নামার সময় দেখিতে পাই আমাদের ক্যাম্প পুড়া বাড়ীর ধূয়া উঠিতেছে। সমতল জায়গায় গিয়ে দেখি লাব্রে মুরুং এর মৃত দেহ। বুকে রাইফেলের ফায়ারের গর্ত। আমি বললাম তোমরা আল্লাহকে স্বরণ কর। আমরা যেদিকে যুদ্ধের সময় উড্র করেছিলাম। সেই দিকে ছড়ায় নামিয়া ত্রিশ ডেফা ক্যাম্পের পথ ধরিলাম। অনুমান বিকাল ৩ ঘটিকার সময় ত্রিশ ঢেবায় পাড়ার উত্তর দিকে পৌঁছে যায়। তখন প্রতিদিন বাজার নিত গোলাম সোবহান ডাক দিল আপনারা কোথায় যাচ্ছেন। আমি বললাম সামনে বড় পাড়া আছে উখানে আমরা যাব। তখন উনি বললেন মেজর সাহেব আপনাদেরকে ছনখোলা পাড়া যেতে বলেছেন। আমরা তাহার সাথে হাটতে শুরু করলাম। তখন বিকাল অনুমান ৫ ঘটিকার সময় পৌঁছে যায়। তখন মেজর সাহেব জিজ্ঞাসা করেন তোমাদের রাইফেল কোথায় এবং তোমাদের সাথে কে কে ছিল? আমি বললাম, আমাদের সাথে জাফর আলম, মিলন, শামশুল আলম ও আরেক জন পালের ছেলে ছিল। আমাদের কাছ থেকে রাইফেলগুলো ছিনাইয়া নিয়াছে। তাহারা নাকি একাই যোদ্ধা করবে। আমি বললাম আমি দক্ষিণ দিকে যাব না। সেখানে পুরিক্ষ্যা আছে। রাত যাপনের পর সকাল ৮ ঘটিকার সময় নাস্তা খেয়ে তাহাদেরকে ধৃত করার জন্য মেজর সাহেব ও আমরা অগ্রসর হইলাম। পাহাড়-পর্বত অতিক্রম করিয়া বিকাল ২ ঘটিকার সময় মোহাম্মদ হোসনের নেতৃত্বে ৪ জন মুক্তিযোদ্ধা ৩ জন বিডিআর ৭টি রাইফেল উদ্ধার করিতে পাঠায়। মোহাম্মদ হোসন কয়েকটি পাড়ায় যাওয়ার পর চিঠি পাঠায় তাহারা গুলির উপর্যুক্ত হইয়াছে। আমরা সন্ধ্যা ৫ ঘটিকার সময় গুইয়ার ঝিরি পৌঁছে যায়। ঐ দিন রাত চাঁদের ১৩ তারিখ ছিল। ৪ জনকে ধৃত করিতে ৭জন গিয়াছে খবর পেয়ে তাহারা ১০টার দিকে মেজর সাহেবের কাছে পৌঁছে যায়। ঐ ৭জন সাড়ে ১০টার দিকে আমাদের স্থানে পৌঁছে যায়। রাত যাপনের পর দুপুরের খাওয়া-দাওয়ার পর মেজর সোবহান সাহেব বিচারে বসেন। তখন আমি আমার ডিউটিতে অবস্থান করি। বিচারে ৬জনকে মাঠিতে শুয়াইয়া ছালাম ওস্তাদ বেত দিয়া বেদব মারধার করে। সত্য কথা বাহির হওয়ার জন্য। সথ্য প্রমাণিত হওয়াতে জাফরকে গুলির নিদ্দের্শ দেওয়া হয়। বাকি তিন জনকে দল থেকে বাহির করে দেওয়া হয়। জাফর জান ভিক্ষা চেয়ে হাতে-পায়ে ধরে জান ভিক্ষা পায়। সন্ধ্যার পর ৩ জন কে মগ সঙ্গী করে তাড়াইয়া দে। ঐদিন আমি ৪ ঘন্টা ডিউটি করি। শমশু বলে যে, স্যার আমি আগামীকাল সকালে বাড়ি চলে যাব। সে এইভাবে বাড়ীতে যায় নাই। মেজর সাহেব শমশু আছেনি? মজা করে বলে। স্যার আমি আছি। তুমি কবে যাবে? এই ভাবে মজা করিত। শমশু ভাই বেতের বারি ৩টি মনে নাই। কিন্তু পিঠে আছে। ২০১৭ সালে অর্থের কাছে হার মানিয়া ভূয়া মুক্তিযোদ্ধা বানিয়েছেন। এই বিচার কি হবে না। আপনার ঐ বেতের কথা মনে নেই। আপনার ইউনিয়নে বা জেলাতে কত জন ভূয়া আছে আপনার জানা আছে। উত্তর দিবেন তো। আজিম মাস্টার ভূয়া কমান্ডার ছিল, কক্সবাজার। রামুতে রনধির বড়–য়া ভূয়া কমান্ডার ছিল। আব্দুল হাই ভূয়া কমান্ডার উখিয়াতে। ১৯৯৯ইংরেজীতে চকরিয়া মহিলা কলেজে যাচাই-বাছাইতে মাহামুদুল্লাহ কোথায় যুদ্ধ করেছেন? বলতে পারে নাই এবং অস্ত্র কোথায় পেয়েছে, বলতে পারে নাই। মৃত জেলা কমান্ডার রমজান আলীকে অর্থ দিয়া মুক্তিযোদ্ধা হয়েছে। মেজর আব্দুস সোবাহানের ১নং প্লাটুনের ১নং টুইয়াছির দায়িত্ব পালন করেছিলাম।
লেখক : বীর মুক্তিযোদ্ধা গাজী গোলাম মৌলা। মুক্তি নং-০২১৩০৩০০৫১, গেজেট নং-৭৪, জাতিয় তালিকা নং-১৪ মোবাইল নং-০১৮১৩৭৮১৩০১ সাং- ফাঁসিয়াখালী, উপজেলা: চকরিয়া, জেলা: কক্সাবাজার।