এম মাঈন উদ্দিন মিরসরাই প্রতিনিধি
প্রকাশ: ২০১৯-০৩-২৪ ২২:৪৭:২৬ || আপডেট: ২০১৯-০৩-২৪ ২২:৪৮:৫০
এম মাঈন উদ্দিন, মিরসরাই (চট্টগ্রাম) : মিরসরাইয়ে ঝুঁকিপূর্ণ ভবনে চলছে উপজেলার পূর্ব বাড়িয়াখালী সরকারী প্রাথমিক বিদ্যালয়ের পাঠদান। ঝুঁকিপূর্ণ ভবনটিতে ২ শিফটে প্রথম, দ্বিতীয়, তৃতীয় ও চতুর্থ শ্রেণীর পাঠদান করানো হয়। যেখানে প্রায় দেড় শতাধিক শিক্ষার্থীর ক্লাশ করে। ভবনটির ছাদের পলেস্তারা খসে পড়ার পাশাপাশি ওয়ালে দেখা দিয়েছে ফাটল। শ্রেণীকক্ষের সংকটের কারণে ঝুঁকিপূর্ণ জেনেও অনেকটা বাধ্য হয়ে ক্লাশ নিতে হচ্ছে শিক্ষকদের। এছাড়াও রয়েছে শিক্ষক সংকট। সরেজমিনে পূর্ব বাড়িয়াখালী সরকারী প্রাথমিক বিদ্যালয়ে গিয়ে দেখা যায়, ১৯৭২ সালে প্রতিষ্ঠিত হওয়া বিদ্যালয়ের পুরতন ভবনটি নির্মাণ করা হয়েছে ১৯৯৬-৯৭ অর্থ বছরে। ৩ কক্ষ বিশিষ্ট ভবনটির ২ টি কক্ষে চলে শ্রেণী কার্যক্রম আর একটিতে রয়েছে শিক্ষকদের অফিস কক্ষ। ভবনের ছাদের পলেস্তারা খসে পড়ে প্রায় সময়। ভবনের ওয়ালের আস্তর খসে পড়ার পাশাপাশি দেখা দিয়েছে বড় বড় ফাটল।
এছাড়া ভবনের মেঝেতেও দেখা দিয়েছে ফাটল। স্যাঁতস্যাঁতে মেঝেতে সৃষ্টি হয়েছে বড় বড় গর্ত। বিদ্যালয়ে ২ কক্ষবিশিষ্ট আর একটি ভবন থাকলেও সেখানে প্রাক-প্রাথমিক থেকে শুরু করে পঞ্চম শ্রেণী পর্যন্ত সব ক্লাশ নেওয়া সম্ভব নয়। তাই অনেকটা বাধ্য হয়ে ঝুঁকিপূর্ণ ভবনে চলছে পাঠদান। উপজেলার প্রত্যন্ত অঞ্চলে অবস্থিত বিদ্যালয়টি প্রায় ২শতাধিক শিক্ষার্থী পড়ালেখা করে। বিদ্যালয়ের প্রথম শিফট শুরু হয় সকাল ৯টা ১৫ মিনিটে। ক্লাশ চলে বেলা ১২টা পর্যন্ত। আর দ্বিতীয় শিফট শুরু হয় বেলা ১২টা ১৫মিনিটে; শেষ হয় বিকেল ৪টায়। বিগত প্রাথমিক সমাপনী পরীক্ষায়ও বিদ্যালয়টির শিক্ষার্থীরা শতভাগ পাশ করেছে।
এদিকে বিদ্যালয়ের শ্রেণীকক্ষ সংকটের পাশাপাশি রয়েছে শিক্ষক সংকটও। বিদ্যালয়ে ৭জন শিক্ষক কর্মরত থাকার কথা থাকলেও রয়েছেন ৪ জন। র্দীঘদিন সহকারী ৩ জন শিক্ষকের পদ শূন্য রয়েছে। এতে ব্যাহত হচ্ছে পাঠদানও। শ্রেনী সংকটের কারণে ২ শিফটে পাঠদান করানো হলেও শিক্ষক সংকটের কারণে প্রতিদিন সব ক্লাশের সব বিষয়ে পরিপূর্ণ পাঠদান করানো হয় না। বিদ্যালয়ের পাশে দিয়ে রয়েছে বামনসুন্দর-বাড়িয়াখালী সড়ক। বিদ্যালয়ের পরিপূর্ণ সীমানপ্রাচীর না থাকায় শিক্ষার্থীরা খেলাধুলা করার সময় ও বিদ্যালয়ে আসা যাওয়ার সময় প্রায় সময় দুর্ঘটনার শিকার হয়। চতুর্র্থ শ্রেণীর শিক্ষার্থী আশরাফুল ইসলাম জানান, বর্ষাকালে ছাদছুঁয়ে পানি পড়ে ভিজে যায় আমাদের বই খাতা। ক্লাশ চলাকালীন সময়ে পলেস্তারা খসে পড়ে আমাদের মাথার উপর। বিদ্যালয়ে আসলে ক্লাশে যেতে ভয় লাগে আমাদের।
স্থানীয় খাজা মঈন উদ্দিন জানান, বাড়িয়াখালী সরকারী প্রাথমিক বিদ্যালয়ে নির্মাণত্রæটির কারণে ভবন নির্মাণের ২৩ বছরের মধ্যে ঝুঁকিপূর্ণ হয়ে গেছে। ঝুঁকিপূর্ণ ভবনে পাঠদান করানোর ফলে শিক্ষার্থীদের পাশাপাশি আমরা সব সময় ভয়ে থাকি দুর্ঘটনার আশঙ্কায়। দ্রæত সময়ের মধ্যে পুরাতন ভবনটি ভেঙ্গে নতুন ভবন করা প্রয়োজন। এছাড়া সীমানা প্রাচীর নির্মাণ ও শিক্ষক সংকটেরও সমাধান করা উচিত। বিদ্যালয়ের প্রধান শিক্ষক সমীর দেব নাথ জানান, ঝুঁকিপূর্ণ ভবনটি ক্লাশ করানোর সময় শিক্ষার্থীদের পাশাপাশি আমরা শিক্ষকরাও ভয়ে থাকি কখন ছাদ ভেঙ্গে পড়ে। শিক্ষকরা ক্লাশ করাতে ভয় পান। শ্রেণীকক্ষ সংকটের কারণে অনেকটা বাধ্য হয়ে আমরা ঝুঁকিপূর্ণ ভবনটি অফিসকক্ষ এবং ১ম, ২য়, ৩য় ও চতুর্থ শ্রেণীর পাঠদান করাচ্ছি। বিদ্যালয় পরিদর্শনে এসে উপজেলা সহকারী শিক্ষা অফিসারও ভবনটিকে ঝুঁকিপূর্ণ হিসেবে চিিহ্নত করে গেছেন। বর্ষাকালের আগে নতুন ভবন না করা হলে এবছরও বৃষ্টিতে ভিজবে শিক্ষার্থীরা।
এছাড়া বিদ্যালয়ের ৩ জন শিক্ষক সংকটের কারণে ব্যাহত হচ্ছে পাঠদান। বিদ্যালয় পরিচালনা কমিটির সভাপতি আলী আকবর জানান, বিদ্যালয়ের ঝুঁকিপূর্ণ ভবন ভেঙ্গে নতুন ভবন করার জন্য উপজেলা শিক্ষা অফিসে অনেকবার যোগাযোগ করেও কোন ফলাফল পাইনি। বড় কোন ভূমিকম্প কিংবা প্রাকৃতিক দুর্যোগ হলে বড় ধরনের ক্ষয়ক্ষতির আশঙ্কা রয়েছে এখানে। উপজেলা শিক্ষা কর্মকর্তা গোলাম রহমান চৌধুরী জানান, উপজেলায় অবস্থিত ঝুঁকিপূর্ণ প্রাথমিক বিদ্যালয়ের ভবনের তালিক সংগ্রহ করা হচ্ছে। যে সকল বিদ্যালয়ের ভবন প্রাথমিকভাবে ঝুঁকিপূর্ণ মনে হচ্ছে সেগুলোকে উপজেলা প্রকৌশল অধিদপ্তরের মাধ্যমে যাচাই বাছাই করা হচ্ছে। প্রকৌশল অধিদপ্তরের প্রতিবেদনের পর নতুন ভবনের জন্য উর্দ্ধতন কর্তৃপক্ষকে জানানো হবে।
এছাড়া বিদ্যালয়ের শিক্ষক সংকট দ্রæত সময়ের মধ্যে সমাধান করা সম্ভব হবে বলে তিনি জানান।