শংকর চৌধুরী খাগড়াছড়ি জেলা প্রতিনিধি
প্রকাশ: ২০১৯-০৬-০৭ ১৯:২২:৩৯ || আপডেট: ২০১৯-০৬-০৭ ১৯:২২:৩৯
খাগড়াছড়ি,প্রতিনিধি॥
তিন পার্বত্য চট্টগ্রাম নিয়ে গঠিত সংরক্ষিত ৯নং মহিলা আসনে এমপি হয়ে জাতীয় সংসদ অধিবেশনে উগ্র সাম্প্রদায়িক, সংবিধান ও রাষ্ট্রবিরোধী বক্তব্য প্রদানকারী বাসন্তী চাকমাকে পাহাড় ত্যাগ করাসহ ৪ দফা দাবীতে বিক্ষোভ মিছিল ও অবস্থান কর্মসূচি করেছে পার্বত্য অধিকার ফোরাম খাগড়াছড়ি জেলা শাখা।
শুক্রবার (৭ জুন) সকাল ১১টায় শহরের চেঙ্গিস্কোয়ার হতে বিশাল বিক্ষোভ মিছিল শহরের প্রদান প্রদান সড়ক প্রদক্ষিন করে মহাজন পাড়াস্থ মূল সড়ক অবরোধ করে। “বাসন্তী চাকমা রাজাকার এইমূহুর্তে পাহাড় ছাড়, সাম্প্রদায়িক বাসন্তীর চাকমার পাহাড়ে ঠাই নাই নানা স্লোগানের মধ্য দিয়ে অবস্থান কর্মসূচি পালন করে সংগঠনটির সহযোগী অঙ্গ সংগঠনের নেতাকর্মীরা।
অবস্থান কর্মসূচিতে বক্তারা বলেন, গত ২৬ ফেব্র“য়ারী মহান জাতীয় সংসদের ১ম অধিবেশনে তার বক্তব্যে পার্বত্য চট্টগ্রামে বসবাসকারী ৫১% শতাংশ বাঙালি জনগোষ্টি ও পার্বত্য চট্টগ্রামের অখন্ডতা রক্ষার দায়িত্বে নিয়োজিত দেশ প্রেমিক সেনাবাহিনীর নামে অপবাদ মূলক কথিত অসত্য, বানোয়াট বক্তব্য প্রদান করেছেন নারী সাংসদ বাসন্তী চাকমা। কথিত ঐ ঘটনাটি কে মহান মুক্তিযুদ্ধের বর্বরতার সাথে তুলনা করে ধর্মকে অবমান করে তার প্রদানকৃত বক্তব্যের সম্পূর্ণ অংশই ছিলো উগ্র সাম্প্রদায়িক ও একপেশে। সে তার বক্তব্যের শুরুতেই পাহাড়ের বসবাসকারী বাঙালিদের সেটেলার ও বহিরাগত আখ্যা দিয়ে বলেছেন যে ১৯৯৬ সালে নাকি বাঙালি ও সেনাবাহিনী ‘আল্লাহু আকবর’ বলে তার চোখের সামনে অনেক উপজাতি কে জবাই করেছেন।
তার বক্তব্যের তীব্র প্রতিবাদ জানিয়ে বক্তারা বলেন, ১৯৯৬ সালে ১-মে এই ধরনের কোন ঘটনাই ঘটেনি। তার বক্তব্য সম্পূর্ণ মিথ্যা ও অন্য কারো দ্বারা সাজানো। এটি তার বক্তব্যেই প্রমানীত, সে কখনো বলেছেন ১৯৮৬ আবার কখনো বলেছেন ১৯৯৬। কিন্তু তার এই ধরনের উগ্র সাম্প্রদায়িক, একপেশে বক্তব্যে মনে হয়েছিলো সে পার্বত্য চট্টগ্রামে সকল জাতি গোষ্টি ও সকল জনগনের প্রতিনিধি নয়, পাহাড়ের বিচ্ছিন্নতাবাদী সশস্ত্র সন্ত্রাসীদের এজেন্ট। কারন সে তার বক্তব্যে ঐ সময়ের রাষ্ট্রদ্রোহী উপজাতী সশস্ত্র দুটি গ্র“পের সন্ত্রাসীদের ভাই বলে সম্বোধন করেছেন। আর বাংলাদেশের নাগরিকদের যারা পাহাড়ে মুক্তিযুদ্ধের সাথে জড়িত বাঙালি ও দেশ রক্ষায় নিয়োজিত সেনাবাহিনীকে বলেছেন সেটেলার ও বহিরাগত খুনি। সে তার বক্তব্যে এটা বলেছেন যে, ঐ সময় থেকে মনে মনে সপ্ন লালন করে রেখেছেন, কখনো সংসদে আসতে পারলে রাষ্ট্রদ্রোহী ভাইদের গেরিলা জীবনের গল্প তুলে ধরবেন। তার সকল বক্তব্যে একথা প্রমানীত যে, স্বাধীনতার স্বপক্ষের শক্তি বাংলাদেশ আওয়ামী লীগের লেভেল জড়িয়ে ঘাপটি মেরে ছিলো-রাষ্ট্রদ্রোহী, বিচ্ছিন্নতাবাদী সশস্ত্র সন্ত্রাসী গোষ্ঠির এজেন্ট, যখনই সুযোগ পেয়েছেন নিজের স্বরূপে ফিরেছেন। কারন ২০০৮ সালে ইউপিডিএফের প্রার্থী হিসেবে খাগড়াছড়ি সদর উপজেলা ভাইস চেয়ারম্যান নির্বাচন করেছেন। পূর্বে সে সশস্ত্র সংগঠন জেএসএসের নারী সদস্য ছিলেন। তার বক্তব্যে সে একটি বারের জন্য বলেনী জাতীর জনক বঙ্গবন্ধুর নির্দেশ অমান্য করে, রাষ্ট্রের বিরুদ্ধে যুদ্ধ ঘোষনাকারী উপজাতীয় সশস্ত্র সন্ত্রাসী দল শান্তিবাহিনীর সৃষ্টি হয়েছিলো। ঐ জেএসএস সন্তু ও প্রীতি গ্র“পের দ্বন্ধের জেরে কিছু উপজাতীয় পরিবার কে বাধ্য করা হয়েছিলো সে দিন ভারতে পালিয়ে যেতে।
যে চুক্তির কারনে পাহাড়ে পাহাড়ে ২ দশকের সশস্ত্র সংঘাতের অবসান হয়ে পাহাড়ে শান্তির সুবাতাস বইছে। পাহাড়ে সার্বিক উন্নয়ন হচ্ছে, সাধারণ উপজাতীয়দের জীবনে উন্নয়ন হচ্ছে। সে চুক্তির পক্ষে কোন বক্তব্য না দিয়ে চুক্তিবিরোধী ইউপিডিএফ ও জেএসএস সন্ত্রাসী ও চাঁদাবাজদের সুরে কথা বলে তাদের মনোবল সঞ্চার করেছেন বলে অভিযোগ করে পার্বত্য অধিকার ফোরাম নেতৃবৃন্দরা।
সমাবেশ থেকে জানানো হয়, গত ২ মার্চ ১৯ইং হতে তার বক্তব্যের প্রতিবাদ জানিয়ে পার্বত্য তিন জেলায় সংবাদ সম্মেলন, মানববন্ধন, প্রতিবাদ সমাবেশ, বিক্ষোভ মিছিল সাংসদ বাসন্তী চাকমার কুশপুত্তলিকা দাহসহ উক্ত চারদফা দাবীতে মাননীয় প্রধানমন্ত্রী বরাবর স্বারকলিপি প্রদান করা হয়। সর্বশেষ ৭ই মাচ তাকে পাহাড়ে অবাঞ্চিত করা হলেও গত ৪ঠা মে গোপনে পাহাড়ে প্রবেশ করে সশস্ত্র সন্ত্রাসীদের সাথে বিভিন্ন গোপন বৈঠকে অংশগ্রহণ করছেন তিনি।
প্রধান অতিথির বক্তব্যে পার্বত্য অধিকার ফোরামের কেন্দ্রীয় সভাপতি মাঈন উদ্দীন বলেন, বাসন্তী চাকমার উগ্র সাম্প্রদায়িক বক্তব্য প্রদান, ধর্মীয় অনুমতিতে আঘাত করে কথা বলা, সাংবিধান ও সংসদ সদস্যের শপথ পরিপন্থি। বাংলাদেশের নাগরিকদের ‘বহিরাগত’, সেটেলার আখ্যা দেওয়া, পার্বত্য চট্টগ্রামের অখন্ডতা রক্ষায় নিয়োজিত দেশ প্রেমিক সেনাবাহিনীর নামে মিথ্যা অপবাদ দেওয়া। ১৯৭১ সালের মহান মুক্তিযুদ্ধে শহীদ হওয়া পার্বত্য চট্টগ্রামের বাঙালি মুক্তিযোদ্ধাদের ত্যাগের প্রতি অসম্মান জানানো ও মুক্তিযুদ্ধের চেতনা কে প্রশ্নবিদ্ধ করেছে। এছাড়াও উপজাতীয় বিচ্ছিন্নতাবাদী সশস্ত্র সন্ত্রাসীদের সুরে কথা বলে তিন পার্বত্য চট্টগ্রামের মানুষের মাঝে উগ্র-সাম্প্রদায়িক ও জাতীগত বিভেদ উস্কে দিয়েছেন এই বাসন্তী চাকমা। তার নির্দেশে তার বিরুদ্ধে পরিচালিত আন্দোলন কর্মসূচি ঠেকাতে তার সন্ত্রাসী ভাইয়েরা গত ১৮ই মার্চের উপজেলা নির্বাচন কর্মকর্তাদের উপর ব্রাশ ফায়ার করে ৮ জনকে হত্যা ও ২৮ জনকে আহত করেছে। তিনি বলেন, উগ্র সাম্প্রদায়িক এই নেত্রী পাহাড়ে আসার সাথে সাথে মহালছড়িতে তার শান্তিবাহিনী ভাইয়েরা দুটি গাড়িতে আগুন লাগিয়ে দেয়। সে পাহাড়ে থাকলে তার উগ্র সাম্প্রদায়িক বক্তব্যের কারনে যে কোন সময় পাহাড়ে বড় ধরনের সাম্প্রদায়িক ঘটনা ঘটতে পারে। তাই তাকে পাহাড় ছাড়ার দাবি জানান।
বৃহত্তর পার্বত্য চট্টগ্রাম ছাত্র পরিষদ খাগড়াছড়ি জেলা সভাপতি জাহিদুল ইসলামের সভাপতিত্বে এতে বিশেষ অতিথির বক্তব্য রাখেন, কেন্দ্রীয় সাধারণ সম্পাদক এস এম মাসুম রানা, মাটিরাঙ্গা উপজেলার ভাইস চেয়ারম্যান ও জেলা শাখার সদস্য সচিব আনিসুজ্জামান ডালিম, কেন্দ্রীয় সমন্বয়ক সাহাবুদ্দীন, সাদ্দাম হোসেন, জেলা আহবায়ক এস এম হেলাল, খাগড়াছড়ি জেলা শাখার যুুগ্ন আহবায়ক মোক্তাদির হোসেন, কেন্দ্রীয় অর্থ সম্পাদক রবিউল হোসেন, বৃহত্তর পার্বত্য চট্টগ্রাম ছাত্র পরিষদ খাগড়াছড়ি জেলা যুগ্ন সম্পাদক ইব্রাহিম খলিল, দীঘিনালা উপজেলা শাখার সভাপতি আলামিন হোসেন,
এসময় অন্যান্যের মধ্যে উপস্থিত ছিলেন, পার্বত্য অধিকার ফোরাম জেলা সদস্য মনসুর আলম হীরা, দিঘীনালা উপজেলা শাখার সিনিয়র সহ-সভাপতি গোলাপ হোসেন, বৃহত্তর পার্বত্য চট্টগ্রাম ছাত্র পরিষদ খাগড়াছড়ি জেলা শাখার প্রচার সম্পাদক সোহেল রানা, দীঘিনালা উপজেলা শাখার সাধারণ সম্পাদক হুমায়ুন আহম্মেদ, মাটিরাঙা উপজেলা শাখার সদস্য সৌরভ হোসেন, সদর ইউনিয়ন কমিটির সভাপতি সালাম, মনির, মুছা ও বাবুল প্রমুখ।
চার দফা দাবি সমূহ: বাসন্তী চাকমাকে ০৭-০৬-১৯ইং এর মধ্যে পাহাড় ত্যাগ করতে হবে। বাসন্তী চাকমার উগ্র সাম্প্রদায়িক, মিথ্যা বক্তব্যের জন্য আনুষ্ঠানিক ভাবে সংসদে দাড়িয়ে জাতির কাছে ক্ষমা চেয়ে তার বক্তব্য প্রত্যাহার করে নিতে হবে। অসাম্প্রদায়িক আওয়ামী লীগের সদস্য হয়েও উগ্র সাম্প্রদায়িক বক্তব্য প্রদান করায় তাকে মহিলা আওয়ামীলীগ হতে বহিস্কার করতে হবে। একজন অসাম্প্রদায়িক নারীকে সংরক্ষিত মহিলা আসনে সংসদ হিসেবে মনোয়ন দিতে হবে।
কর্মসূচি: উগ্র সাম্প্রদায়িক বাসন্তী চাকমা ০৭-০৬-১৯ইং শুক্রবারের মধ্যে পার্বত্য চট্টগ্রাম ত্যাগ না করলে আগামী ০৯-০৬-১৯ইং রোজ রবিবার খাগড়াছড়ি তে সকাল সন্ধ্যা অবরোধ পালন করা হবে ঘোষনা।