চট্টগ্রাম, , শুক্রবার, ২৯ মার্চ ২০২৪

নীড়ের টানে স্মৃতির বানে: চট্টগ্রাম মেডিকেল কলেজের ৩৮/৭ ব্যাচের পূণর্মিলন

প্রকাশ: ২০১৯-০৬-১৯ ২৩:৪৬:৩১ || আপডেট: ২০১৯-০৬-১৯ ২৩:৫০:৩৭

ওয়ারদাতুল জিনান:

মানুষ যখন আবেগতাড়িত হয়ে স্মৃতির বানে ভাসতে থাকে তখন তারা একটি নীড় অর্থাৎ আশ্রয়স্থল খুঁজে, যেখানে তারা একত্রিত হয়ে ভালবাসা আদান-প্রদানের মাধ্যমে স্মৃতিচারণ করে। এতে অনুভূতি খুঁজে পায় ভাষা, স্মৃতিতাড়িত মানুষগুলি ক্ষণিকের জন্যে হলেও খুঁজে পায় ফেলে আসা সেই স্মৃতিরাঙা দিনগুলি। এমনই এক আনন্দক্ষণের কথা আমি কলমের আঁচড়ে শব্দের গাঁথুনিতে আজ তুলে ধরার চেষ্টা করছি।

দিনটি ছিলো ১৪ই জুন, শুক্রবার, ২০১৯। স্ব-স্ব স্থানে প্রতিষ্ঠিত একঝাঁক তরুণ ডাক্তার দূর- দূরান্ত থেকে ছুটে এসেছিলেন নীড়ের টানে স্মৃতির বানে কর্ণফুলীনদীর তীরে, যারা ছিলেন আমার পরীদের বাবার মেডিকেল কলেজের ব্যাচম্যাট। যাদের প্রায় সবাই ছিলেন আমার অপরিচিত। কাজেই এতজন অপরিচিত ও প্রতিষ্ঠিত মানুষের ভিড়ে নিজেকে বড্ড বেমানান ও অবাঞ্ছিত মনে হওয়ায় প্রথমে ভেবেছিলাম যাবোনা। পরে যখন রিভারক্রুজের কথা শুনলাম তখন প্রকৃতির সৌন্দর্য ভান্ডার খরস্রোতা কর্ণফুলীর নয়নাভিরাম দৃশ্যাবলি উপভোগ করার লোভ সামলাতে পারলামনা প্রকৃতিপ্রেমী এই আমি।

জাহাজের বারান্দায় বসে জলের উপর দিয়ে ভেসে-ভেসে যাওয়া ও নদীর কলতান কানপেতে শুনা সত্যিই মনোমুগ্ধকর! দুপাশে অসংখ্য গাছগাছালি, লতাগুল্ম কর্ণফুলীকে দিয়েছে অপার সৌন্দর্যের ইশারা। অন্যদিকে সেদিন মেঘের ভেলায় চড়ে দিগ্বিজয়ী বীরের মতো সশব্দ উল্লাসে আত্নপ্রকাশ ঘটেছে বর্ষার, যার ছোঁয়ায় বর্ণাঢ্য রঙে রঙিন হয়ে উঠা কর্ণফুলী রাজার মতো বুক ফুলিয়ে চলেছে অবিরাম, অঙ্গজুড়ে তার কত রূপ! যেন ঢল-ঢল ভরা যৌবন। দুরন্ত -দুর্দমনীয় তার চলার গতি, ভৈরবীর মতো উন্মত্ত গতিতে ছুটে চলেছে সে আনমনে। তারই বুকে ভেসে বেড়াচ্ছে রং-বেরঙের পালতোলা নৌকার সারি ও ছোটবড় অসংখ্য জাহাজ, এতে দূর থেকে দেখলে মনে হয় একঝাঁক সারস পরম আদরে তাদের ডানা মেলে ধরেছে। সেদিনের আবহাওয়াও ছিলো চমৎকার! কখনো আকাশের বুক চিরে ঝরেছে বাদলধারা, কখনোবা সোনালী রোদ্দুর হেসে হয়েছে  কুটিকুটি। রোদ-বৃষ্টির লুকোচুরি মাঝে আমরা সবাই জাহাজে উঠে পড়লাম। কুশল বিনিময়, পরিচয় পর্ব ও সকালের নাস্তা শেষে দেখলাম বন্ধুবৎসল ডাক্তারবাবুদের পূণর্মিলন। সে দৃশ্য ছিলো বড্ড সুখের, দৃষ্টিনন্দন ও হৃদয়গ্রাহি। উনাদের সুন্দর ও মার্জিত ব্যবহার, আন্তরিকতা ও সারল্য দেখে আমার এতোটাই ভালো লেগেছিল যে মনে হলো উনারা অনেকদিনের চেনা, আমার পরম আত্মীয়। সুন্দর একটা সাংস্কৃতিক অনুষ্ঠানের আয়োজনও ছিলো সেখানে। কেউ সংগীত পরিবেশন করেছেন, কেউবা কৌতুক, আবৃত্তি আবার অনেকে দেখলাম অতীতের স্মৃতিচারণ করছেন আবেগাপ্লুত হয়ে, ছোটছোট বাচ্চাদের পরিবেশনা ছিলো অপূর্ব, আর অনুষ্ঠান উপস্থাপনাও ছিলো চমৎকার! সকলে যেন নিজেদের বর্তমান ভুলে ফিরে গিয়েছিলেন পেছনে ফেলে আসা স্মৃতিরাঙা সোনালী সেই দিনগুলিতে। উনাদের ছেলেমানুষী, মিষ্টি খুঁনসুটি, আতিথেয়তা, ভদ্রতা ও প্রীতিস্নিগ্ধ ব্যবহারে আমি সত্যিই বিমোহিত, আপ্লুত। আসলে সেদিন সুন্দর মননের আত্মপ্রকাশের মধ্য দিয়ে অজানা এক ভাললাগায় পুলকিত হয়েছিল উপস্থিত সবকটি হৃদয়।আমাদের জাহাজ হেলেদুলে ছুটে চলছে তার আপন গন্তব্যে। হঠাৎ এক পশলা বৃষ্টি এসে তীব্র দাবদাহের মাঝে হিমেল আবেশে জড়িয়ে নিলো আমাদের। রিমঝিম বৃষ্টির ছন্দ ভাললাগায় নতুন মাত্রা যোগ করলো। এরই মধ্যে আমরা পৌঁছে গেলাম গন্তব্যে। দেখি আকাশ প্লাবিত সুমিষ্ট রোদ্দুর স্বাগত জানাচ্ছে আমাদের। পাহাড়ের গা ঘেঁষে গড়ে উঠা সুন্দর- নয়নাভিরাম কাপ্তাই পর্যটন কেন্দ্র। প্রত্যেকে নিজেদের পছন্দ মতো ঘুরলাম, ভাললাগার মূহুর্তগুলিকে ক্যামরাবন্দী করলাম। নির্দিষ্ট সময়ে সবাই জাহাজে ফিরে এলাম। আমাদেরকে পরম যত্নে আপ্যায়ন করা হলো, বাচ্চাদের পুরষ্কৃত করা হলো। এরপর পরিবেশিত হলো বিকেলের নাস্তা। অন্যদিকে শুরু হলো মেঘমালার ক্রন্দন। টাপুরটুপুর শব্দে সে যেন আমাদেরকে বিদায়ী সম্ভাষণ জানাচ্ছে। সেই সাথে পশ্চিমাকাশে অস্তরবির রক্তরাগ ছড়ানো দৃশ্যপট সত্যিই মনোলোভা। সব মিলিয়ে চমৎকার একটি দিন কেটেছে সেদিন। এতো সুন্দর ও উপভোগ্যকর একটি দিন উপহার দেওয়ার পেছনে যারা কার্যকর ভূমিকা পালন করেছেন উনাদেরকে ধন্যবাদ না জানালে নিজেকে বড্ড অবিবেচক মনে হবে। তাই আন্তরিক ধন্যবাদ জানাচ্ছি ডা: ফয়সাল, ডা: রহিম, ডা: হাবিব, ও ডা: নাজিম ভাই সহ আরো নাম না জানা অনেককে। প্রত্যাশা করছি আপনারা আবার একত্রিত হবেন নতুন কোন সৌন্দর্যময় ভূখণ্ডে, যার সাক্ষী হবো আমিও, আর সেই গল্প লিখে রাখবো আমি মনের মাধুরি দিয়ে । আপনাদের বন্ধুত্বের বন্ধন আরো দৃঢ় ও মজবুত হউক, বেঁচে থাকুক আপনাদের সুন্দর বন্ধুপ্রেমী মনগুলি, সবাই ভালো থাকবেন। আল্লাহ হাফেজ।

Leave a Reply

Your email address will not be published. Required fields are marked *