চট্টগ্রাম, , শনিবার, ২০ এপ্রিল ২০২৪

খালেদ হোসেন টাপু রামু(কক্সবাজার) প্রতিনিধি

কক্সবাজারে প্রতিমা বিসর্জনে লাখো মানুষের মিলন মেলা

প্রকাশ: ২০১৯-১০-০৯ ০১:২২:০৬ || আপডেট: ২০১৯-১০-০৯ ০১:২২:১৩

খালেদ হোসেন টাপু, কক্সবাজার :

প্রতিমা বিসর্জন উপলক্ষে বিশ্বের দীর্ঘতম কক্সবাজার সমুদ্র সৈকতে লাখো মানুষের ঢল নেমেছে।

মঙ্গলবার (০৮ অক্টোবর) বিকেলে সনাতন ধর্মাবলম্বীদের সবচেয়ে বড় ধর্মীয় উৎসব শারদীয় দুর্গাপূজার শেষ দিন বিজয়া দশমীতে সৈকতের লাবনী পয়েন্টে এ অনুষ্ঠানের আয়োজন করে জেলা পূজা উদযাপন পরিষদ।

আয়োজকরা জানান, শুধুমাত্র সৈকতের লাবনী পয়েন্টে এ অনুষ্ঠানে বিভিন্ন উপজেলা থেকে আসা ১০৩টি প্রতিমা বিসর্জন দেওয়া হবে। এছাড়া একই সময়ে কক্সবাজারের রামুর বাঁকখাল নদী, চকরিয়ার মাতামুহুরী, টেকনাফের সাগর ও নাফনদী, উখিয়ার ইনানী সৈকত ও রেজুনদীতে প্রতিমা বিসর্জন দেওয়া হয়েছে। রামু ও চকরিয়ায় পৃথক প্রতিমা বিসর্জন অনুষ্ঠান অনুষ্ঠিত হয়েছে।

রামুর কেন্দ্রীয় কালী মন্দিরের পুরোহিত সুবীর ব্রাহ্মণ চৌধুরী বলেন, এবার মা দুর্গা এসেছেন ঘোড়ার পিঠে চড়ে। যাচ্ছেনও ঘোড়ায় চড়ে। এ কারণে এবার আমরা ঝড় ঝাপটার আশঙ্কা করেছিলাম। তাই মা দুর্গার কাছে আমাদের বিশেষ প্রার্থনা ছিল- প্রাকৃতিক বিপর্যয় থেকে মানুষ যেন রক্ষা পায়। মা দুর্গা আমাদের প্রার্থনা শুনেছেন। যে কারণে আবহাওয়া আমাদের অনুকূলেই ছিল।

এদিকে, প্রতিমা বিসর্জন অনুষ্ঠানকে ঘিরে সৈকতের লাবনী পয়েন্টে এদিন দুপুর ২টার পর থেকে জেলার উখিয়া, টেকনাফ, সদর, ঈদগাঁও, চৌফলদণ্ডী ছাড়াও নাইক্ষ্যংছড়ি থেকে শোভাযাত্রা সহকারে প্রতিমা আসতে শুরু করে। ট্রাকে ট্রাকে আসতে আসতে প্রতিমায় ভরে যায় অনুষ্ঠানস্থল। বিকেল প্রায় সাড়ে ৫টা পর্যন্ত সৈকতের বালুচরে রাখা দুর্গা প্রতিমা ঘিরে চলে ভক্তদের শেষ আরাধনা। শুধু তাই নয়, নাচে-গানে এক অন্য রকম আনন্দমুখর পরিবেশ সৃষ্টি হয় বিশ্বের দীর্ঘতম এ সৈকতে। অনুষ্ঠানকে ঘিরে সমাগম ঘটে পর্যটকসহ জেলার বিভিন্ন স্থান থেকে আসা লাখো মানুষের।

বিকেল সাড়ে ৩টার দিকে সৈকতের লাবনী পয়েন্টের উন্মুক্ত মঞ্চে শুরু হয় বিসর্জন অনুষ্ঠানের আনুষ্ঠানিকতা।

জেলা পূজা উদযাপন পরিষদের সভাপতি রণজিৎ দাশের সভাপতিত্বে অনুষ্ঠানে প্রধান অতিথি ছিলেন রামু-কক্সবাজার আসনের সংসদ সদস্য সাইমুম সরওয়ার কমল।

এতে বিশেষ অতিথি হিসেবে উপস্থিত ছিলেন- মহেশখালী-কুতুবদিয়া আসনের সংসদ সদস্য আশেক উল্লাহ রফিক, চকরিয়া-পেকুয়া আসনের সংসদ সদস্য মো. জাফর আলম চৌধুরী, সংরক্ষিত মহিলা আসনের সংসদ সদস্য কানিজ ফাতেমা মোস্তাক, জেলা প্রশাসক মো. কামাল হোসেন, পুলিশ সুপার এ বি এম মাসুদ হোসেন, জেলা আওয়ামী লীগের সভাপতি অ্যাডভোকেট সিরাজুল মোস্তফা, সাধারণ সম্পাদক ও কক্সবাজার পৌরসভার মেয়র মুজিবুর রহমান, হিন্দু ধর্মীয় কল্যাণ ট্রাস্টের ট্রাস্টি অধ্যাপক প্রিয়তোষ শর্মা চন্দন প্রমুখ।

সভা পরিচালনা করেন পরিষদের সাধারণ সম্পাদক বাবুল শর্মা।

সাইমুম সরওয়ার কমল বলেন, বাংলাদেশ সাম্প্রদায়িক সম্প্রীতির দেশ। সবধর্মের মানুষের অংশ গ্রহণেই এদেশে একইসঙ্গে ঈদ, পূজা, প্রবারণা ও বড়দিন পালিত হয়। বিজয়া দশমীর এ মহামিলন মেলা এর উজ্জ্বল দৃষ্টান্ত।

তিনি বলেন, আজকের এ অনুষ্ঠানে সবধর্মের মানুষের সহাবস্থান রয়েছে। এখানে সনাতন ধর্মাবলম্বীরা যেমন আছেন। পাশাপাশি মুসলিম, বৌদ্ধ ও খৃস্টান সম্প্রদায়ের মানুষও আছেন। এটাই বাঙালির অসাম্প্রদায়িক বাংলাদেশের উজ্জ্বল দৃষ্টান্ত। আমরা সবাই মিলে শারদীয় মাঙ্গলিক দেবী দুর্গা বিসর্জন মেলায় মিলিত হয়েছি।

জেলা পূজা উদযাপন কমিটির সাধারণ সম্পাদক বাবুল শর্মা জানান, এ বছর জেলায় ২৯৬টি মণ্ডপে পূজা উদযাপন হয়েছে। এর মধ্যে ৮০ শতাংশ প্রতিমা বিসর্জন দেওয়া হয়েছে কক্সবাজার সৈকতে।

তিনি বলেন, প্রতিমা বিসর্জন নিরাপদ করতে প্রশাসনের পক্ষ থেকে তিনস্তরের নিরাপত্তা বেস্টনি গড়ে তোলা হয়েছে।

জেলা পূজা উদযাপন পরিষদের সভাপতি রণজিৎ দাশ জানান, বিশ্বের দীর্ঘতম কক্সবাজার সমুদ্র সৈকতে অনুষ্ঠিত এ অনুষ্ঠান দেশের সবচেয়ে বড় প্রতিমা বিসর্জন অনুষ্ঠান। আবহাওয়া অনুকূলে থাকায় এ বছরও এখানে দেশি-বিদেশি পর্যটকসহ লাখো মানুষের সমাগম হয়েছে।

কক্সবাজারের পুলিশ সুপার এ বি এম মাসুদ হোসেন জানান, জেলার আট উপজেলার ২৯৬টি পূজামণ্ডপে তিনস্তরের নিশ্ছিদ্র নিরাপত্তা ব্যবস্থা জোরদারের মধ্য দিয়ে সনাতন ধর্মাবলম্বীদের সবচেয়ে বড় শারদীয় দুর্গোৎসব শেষ হচ্ছে মঙ্গলবার।

তিনি জানান, সমুদ্র সৈকতে বিজয়া দশমীর প্রতিমা বিসর্জন অনুষ্ঠান সুষ্ঠুভাবে সম্পন্ন করতেও একইভাবে নিরাপত্তা বেষ্টনি তৈরি করা হয়েছে। শুধু সৈকত এলাকায় প্রায় চারশো ফোর্স মোতায়েন করা হয়েছে।

এছাড়া যানজট নিরসনে সৈকতের কলাতলী থেকে আশপাশের সড়কগুলোতে যানজট প্রতিরোধে ট্রাফিক পুলিশের বিশেষ ব্যবস্থা জোরদার করা হয়েছে।

Leave a Reply

Your email address will not be published. Required fields are marked *