চট্টগ্রাম, , শনিবার, ২০ এপ্রিল ২০২৪

শংকর চৌধুরী খাগড়াছড়ি জেলা প্রতিনিধি

পাহাড়ি পথের প্রতীক “অনিল চাকমা ‘পিন্টু” আর নেই

প্রকাশ: ২০১৯-১১-২৯ ০২:৪৯:০৪ || আপডেট: ২০১৯-১১-২৯ ০২:৪৯:১২


খাগড়াছড়ি, প্রতিনিধি :

পার্বত্য জেলা খাগড়াছড়ির পাহাড়ি পথের প্রতীক নামে পরিচিত, হাসিমাখা সকলের চিরচেনা প্রিয়মুখ এনজিও কর্মী অনিল চাকমা (৪৫) “পিন্টু” আর বেচে নেই। পারি জমিয়েছেন না ফেরার দেশে। বুধবার ২৭ নভেম্বর রাতে শহরের পশ্চিম নারানখাইয়া গ্রামের নিজ বাড়িতে পরলোক গমন (মৃত্যুবরণ) করেছেন।


তার মৃত্যুতে সামাজিক যোগাযোগ মাধ্যম ফেইসবুক সহ খাগড়াছড়ির পাহাড়ি জনপদে শোকের ছায়া নেমে এসেছে। তার এ ভাবে চলে যাওয়া যেন কেউই মেনে নিতে পারছেনা।


নিরঅহংকারী, নিরলোভ পরোপকারী, সদা হাস্যোজ্জ্বল ‘অনিল চাকমা’ পাহাড়ি জনপদের পিছিয়ে পড়া শিশুদের শিক্ষার আলোয় আলোকিত করতে এবং ক্ষুদ্র,ক্ষুদ্র জাতিগোষ্ঠী গুলোর জীবনমান উন্নয়নে প্রতিনিয়ত ছুটে বেড়াতেন, পাহাড়ের একপ্রান্ত থেকে আরেক প্রান্তে। প্রাকৃতিক দুর্যোগ আর ক্লান্তির কাছে হার না মানা ‘অনিল চাকমা’ এলাকার পাহাড়ি জনপদে ‘পিন্টু দা’ নামেই সকলের প্রিয় পরিচিত মুখ।
বিশ্ব খাদ্য কর্মসূচি ও পার্বত্য চট্টগ্রাম টেকসই সামাজিক সেবা প্রদান প্রকল্পের সহযোগিতায়, স্কুল ফিডিং প্রোগ্রাম প্রকল্পের মাধ্যমে পার্বত্য জেলার ১৪৩৩ টি পাড়াকেন্দ্র সহ বিভিন্ন কর্মসূচি বাস্তবায়ন কারি প্রতিষ্ঠান।

জাবারাং কল্যাণ সমিতির কর্মসূচি সমন্বয়কারী বিনোদন ত্রিপুরা জানান, এই সংস্থার বিভিন্ন কর্মসূচি বাস্তবায়নে প্রোগ্রাম মনিটরিং এন্ড ইভালুয়েশন অফিসার হিসেবে ২০০৪ সাল থেকে মৃত্যুর আগপর্যন্ত নিরলস ভাবে কাজ করেছেন ‘অনিল চাকমা ‘পিন্টু’। একজন সদ, দক্ষ ও নিরলস কর্মীকে হারিয়েছেন সংস্থাটি। যার অভাব অপুরণীয়। তার মৃত্যুতে পার্বত্যাঞ্চলের এনজিও পরিবার গুলোতে শোকের ছায়া বইছে। পরিবার ও এলাকায় শোকের মাতম।


পরিবার সূত্রে জানাগেছে, ‘অনিল চাকমার’ সহধর্মীনি বনশ্রী চাকমা অসুস্থতা জনিত কারনে চিকিৎসার জন্য ভারতের চেন্নায়ে অবস্থান করছেন, আর মেয়ে ঢাকায় থাকেন।

প্রতিদিনের মত বুধবার বিকেলেও অফিস শেষে বাসায় ফিরে রাতে খাবার খেয়ে একলা ঘরে নিযের রুমে শুতে যায়। সকালে তার মা সুপ্রভা চাকমা ছেলেকে অনেক ডাকাডাকি করেও সাড়া না পেয়ে স্বামী, ছোট ছেলে ও আশপাশের লোকজন ডেকে দড়জা ভেঙ্গে ভিতরে ঢুকে খাটের ওপর শুয়ে আছে দেখতে পায়। নিশ^াস নেই হাত-পা ঠান্ডা হয়ে আছে দেখে পরে খাগড়াছড়ি সদর হাসপাতালে নিয়ে গেলে কর্তব্যরত ডাক্তার সে মৃত বলে জানান। ধারণা করা হচ্ছে রাতের কোন এসময় স্টোক জনিত কারনে তার মৃত্যু হয়েছে।


মা সুপ্রভা চাকমার মনে হয়তোবা জানান হয়েছিল তাইতো রাতে একলা ঘরে শুতে যাওয়ার সময় ছেলেকে বলেছিলেন, বাবারে ঘরে একা থাকতে তোর ভাল লাগবে না আমি তোর পাশের রুমে থাকব। তখন ছেলে নাকি বলেছিল, না থাকতে হবেনা একলা থাকতে পারবে। মা সুপ্রভা মনকে কিছুতেই বুঝাতে পারছেনা আর্তনাদ করছে আর বলছে, আমি পাশে থাকলে ছেলের খারাপ লাগলে জানতে পারতাম। আমার সুস্থ সবল, শান্তশিষ্ট ছেলেটা এভাবে কাউকে কিছু না বলে চিরদিনের মত চলে যেতে পারেনা। আমাদের ওপর তার এমন কি অভিমান ছিল এভাবে চলে গেলে। পাশেই লাগোয়া ঘরে থাকতেন বাবা-মা আর ছোট ভাই। বিধাতার কি নিষ্ঠুর বিধান মাকে একলা থাকতে পারবে বলে, চিরদিন একলা থাকার জন্য পারি জমালেন ওপারে না ফেরার দেশে।


পশ্চিম নারানখাইয়া এলাকার সুবোধ কুমার চাকমা ও শিক্ষকতা থেকে অবসর নেয়া সুপ্রভা চাকমার পরিবারে দুই ছেলের মধ্যে অনিল চাকমা বড়। তার সহধর্মীনি একসময়ের নৃত্য শিল্পী বনশ্রী চাকমার ঘরে একমাত্র মেয়ে ঋতিকা চাকমা ঢাকার একটি কলেজে ইন্টা ফাস্ট ইয়ারে অধ্যায়নরত।


তার সহধর্মীনি ও মেয়ে খাগড়াছড়িতে ফিরলে শুক্রবার নিজ বাড়ীতে ধর্মীয় অনষ্ঠানাদি শেষে দুপুরে খবংপুরিয়া মহাশ্মশানে দাহক্রীয়া সম্পন্ন করা হবে বলে পারিবারিক সূত্রে জানান গেছে।


কি আর করা একজন সংবাদকর্মী বলেই, হয়তোবা অনেক অভিমান আর কষ্ট নিয়ে কাউকে না বলে চলে যাওয়া, ভালোলাগা কাছের প্রিয় মানুষ গুলোর মৃত্যুর খবরও লিখতে হয় অনেক কষ্টে আর অশ্রুসিক্তে। যেখানেই থাকেন ভালো থাকবেন, প্রিয় “অনিল চাকমা, পিন্টু” দাদা।

Leave a Reply

Your email address will not be published. Required fields are marked *