চট্টগ্রাম, , শনিবার, ২৭ এপ্রিল ২০২৪

শংকর চৌধুরী খাগড়াছড়ি জেলা প্রতিনিধি

কৈশোর-বান্ধব স্বাস্থ্যসেবা নিশ্চিত হওয়া প্রয়োজন : খাগড়াছড়িতে এডভোকেসি সভায় বক্তারা

প্রকাশ: ২০১৯-১২-০৪ ১৯:৫৪:৪১ || আপডেট: ২০১৯-১২-০৪ ১৯:৫৪:৪৬

খাগড়াছড়ি,প্রতিনিধি :

“পরিবার পরিকল্পনা সেবা গ্রহন করি কৈশোরকালীন মাতৃত্ব রোধ করি” প্রতিপাদ্যে, পরিবার কল্যাণ সেবা ও প্রচার সপ্তাহ উপলক্ষে খাগড়াছড়িতে এডভোকেসি সভা ও প্রেস ব্রিফিং করেছে পরিবার পরিকল্পনা বিভাগ।

বুধবার সকাল সাড়ে ১১ টায় শহরের কোর্ড মসজিদ ভবনস্থ পরিবার পরিকল্পনা বিভাগের অস্থায়ী কার্যালয়ে জেলায় বিভিন্ন মিডিয়ায় কর্মরত সাংবাদিকদের নিয়ে এ প্রেস ব্রিফিং অনুষ্ঠিত হয়। খাগড়াছড়ি পার্বত্য জেলা পরিষদ সদস্য ও পরিবার পরিকল্পনা বিভাগের আহবায়ক খোকনেশ্বর ত্রিপুরার সভাতিত্বে এতে প্রধান অতিথি ছিলেন, জেলা প্রশাসক প্রতাপ চন্দ্র বিশ্বাস।

সভায় পরিবার পরিকল্পনা সেবা বিষয়ে মুল প্রবন্ধ উপস্থাপন করেন, খাগড়ছড়ি পরিবার পরিকল্পনা বিভাগের উপ-পরিচালক (ভারপ্রাপ্ত) বিপ্লব বডুয়া।

তিনি বলেন, বিশ্ব স্বাস্থ্য সংস্থা (ডব্লিউএইচও) এর সংজ্ঞা অনুযায়ী, ১০ থেকে ১৯ বছর বয়সী ছেলে-মেয়েদের কিশোর-কিশোরী এবং এ সময়কে কৌশোরকাল বলা হয়। কৈশোরকাল হলো মানবজীবনের দ্বিতীয় দশক যখন কিশোর-কিশোরী শারীরিক, মানসিক এবং সামাজিক পরিবর্তনের মধ্য দিয়ে প্রাপ্ত বয়সে পদার্পন করে। এ সময়ে দেহবৃদ্ধি, হরমোন এর প্রভাব ও মস্তিস্কে ¯œায়বিক উন্নয়ন ইত্যাদি আভ্যন্তরীন পরিবর্তনের সাথে মনো-সামাজিক পরিবর্তন, আবেগ ও বুদ্ধিমত্তার বহি:প্রকাশ ঘটে।

সাধারণত কিশোর-কিশোরী আবেগী হয়, ঝুঁকি নিতে পছন্দ করে, অন্যের উপর নির্ভরশীল থাকে (পিতা-মাতা/অভিভাবক), নিজে কোন সিদ্ধান্ত নিতে পারে না বটে কিন্তু তারা আত্বপ্রত্যয়ী ও সম্ভাবনাপূর্ণ হয়ে থাকে। আর তায় দেশের মানবসম্পদের একটি গুরুত্বপূর্ণ অংশ কিশোর-কিশোরীদের বর্তমান, পরিণত বয়স ও ভবিষ্যত প্রজন্মের কল্যাণে তাদের শারীরিক ও মানসিক বিকাশে সহায়তা প্রদান, স্বাস্থ্য ও পুষ্টিতে বিনিয়োগ এবং কৈশোর-বান্ধব স্বাস্থ্যসেবা নিশ্চিত হওয়া প্রয়োজন।

বক্তারা বলেন, বিশ্ব স্বাস্থ্য সংস্থা’র সংজ্ঞা অনুযায়ী প্রজনন স্বাস্থ্য কেবলমাত্র প্রজননতন্ত্রের রোগ বা অসুস্থতার অনুপস্থিতিকেই বুঝায় না বরং শারীরিক, মানসিক, সামাজিক কল্যাণে পরিপূর্ণ অবস্থার মধ্য দিয়ে প্রজনন প্রক্রিয়া সম্পাদনের একটি মাধ্যম। যৌন স্বাস্থ্য কেবলমাত্র সুস্থ শারীরিক, মানসিক ও সামাজিক অবস্থা এবং প্রজনন পদ্ধতি ও প্রক্রিয়া সংক্রান্ত কোন রোগ বা দুর্বলতার অনুপস্থিতিই নয়, প্রজনন স্বাস্থ্য হল এগুলোর পাশাপাশি পরিপূর্ণ ও সন্তোষজনক যৌনজীবন, প্রজনন ক্ষমতা ও প্রজনন স্বাধীনতার সমন্বয়। এই বক্তব্যের সাথে পুরুষ ও নারীর অধিকার, নিরাপদ, কার্যকরী, সুলভ ও গ্রহণযোগ্য পরিবার পরিকল্পনা পদ্ধতি জড়িত। এর সাথে প্রজনন ক্ষমতা, জন্মনিয়ন্ত্রণের পদ্ধতি, নিরাপদ মাতৃত্ব ও প্রয়োজনীয় স্বাস্থ্যসেবা জড়িত।

বক্তারা আরো বলেন, বাল্যবিয়ে ও কৈশোরকালীন মাতৃত্ব বাংলাদেশে একটি বড় সমস্যা । পরিসংখ্যান মতে, ১৫-১৯ বছর বয়সের প্রতি ৫ (পাঁচ) জনের প্রায় ৩ (তিন) জন মেয়েদের বিয়ের আইনগত বয়স ১৮ বছরের পূর্বেই বিয়ে হয় এবং তাদের প্রায় এক-তৃতীয়াংশ প্রথম বা দ্বিতীয় গর্ভধারণ করে থাকে। ফলে তাদের স্বাভাবিক স্বাস্থ্য-উন্নয়ণ ও কল্যাণ ব্যাহত হয় এবং নানা ধরণের শারীরিক, মানসিক ও সামাজিক সমস্যায় ভোগে এবং অকালে মা ও নবজাতকের মৃত্যুও হতে পারে।

কৈশোরে গর্ভধারণ অত্যন্ত ঝুঁকিপূর্ণ। কারণ এসময় কিশোরীর নিজেরই শারীরিক বৃদ্ধি অসম্পূর্ণথাকে, তাই তার পুষ্টিসহ শারীরিক বৃদ্ধি ও মানসিক বিকাশ তখনও চলতে থাকে। এ অবস্থায় গর্ভধারণ করলে কিশোরী মা ও শিশু উভয়ই ঝুঁকির মধ্যে পড়ে যায়। গর্ভাবস্থায় কিশোরীর সাথে সাথে তার মধ্যে বেড়ে ওঠা সন্তানেরও নানা প্রকার পুষ্টির দরকার হয় অথচ এ সকল সেবা এবং পুষ্টি কিশোরীর জন্য সব সময় পাওয়া সচরাচর সম্ভব হয়না।

জানানো হয়, প্রাতিষ্ঠানিক শিক্ষা কিশোর-কিশোরীদের জ্ঞান ও চিন্তাশক্তি বাড়ানোর পরিবেশ সৃষ্টি করে। বাংলাদেশে বাল্যবিবাহ ও বিভিন্ন কারণে কিশোরীরা এবং কিশোরদের ক্ষেত্রে পরিবারের জন্য উপার্জন করতে গিয়ে তারা শিক্ষা থেকে ঝরে পড়ে।

উল্লেখ্য, বর্তমান সরকারের গৃহীত স্কুুলভিত্তিক কৈশোর স্বাস্থ্যসেবা এবং ষষ্ঠ শ্রেণী থেকে দশম শ্রেণী পর্যন্ত প্রজনন স্বাস্থ্যসহ কৈশোরকালীন স্বাস্থ্য পাঠ্যপুস্তকে অন্তর্ভূক্তিকরন, বয়ঃসন্ধিকালের শারীরিক ও মানসিক পরিবর্তন সম্পর্কে তাদেরকে সচেতন করে তুলতে ভূমিকা রাখছে।

উপজেলা পরিবার পরিকল্পনা কর্মকর্তা নিটোল মনি চাকমার সঞ্চালনায় ডা: আশুতোষ চাকমা, খাগড়াছড়ি প্রেস ক্লাব সভাপতি জিতেন বড়–য়া বক্তব্য রাখেন। এসময় স্থানীয় দৈনিক অরন্যবার্তা পত্রিকার সম্পাদক ও বাংলাদেশ টেলিভিশন (ভিটির) লোকলোকালয়ের উপস্থাপক ও ব্যবস্থাপক চৌধুরী আতাউর রহমান রানা, প্রেস ক্লাবের সাধারণ সম্পাদক আবু তাহের মোহাম্মদ, সাংবাদিক ইউনিয়ন (কেইউজে’র) প্রতিষ্ঠাতা সহ-সভাপতি প্রদীপ চৌধুরী সহ জেলায় বিভিন্ন মিডিয়ায় কর্মরত সাংবাদিক এবং পরিবার পরিকল্পনা কর্মীরা উপস্থিত ছিলেন।

Leave a Reply

Your email address will not be published. Required fields are marked *