চট্টগ্রাম, , শনিবার, ২০ এপ্রিল ২০২৪

কাইছার হামিদ

চরম্বা ইউনিয়ন একটি ইটভাটা গ্রাম!

প্রকাশ: ২০১৯-১২-০৮ ১৯:২১:৩৫ || আপডেট: ২০১৯-১২-০৮ ১৯:২১:৪৫

কাইছার হামিদ: সবুজ পাহাড় বেষ্টিত প্রাকৃতিক সৌন্দর্য্যের লীলাভূমি লোহাগাড়া উপজেলার চরম্বা ইউনিয়ন। ছোট ছোট পাহাড়-টিলা ও বনভূমির ব্যাপ্তি ছড়িয়ে আছে এ গ্রামে। পরিবেশবান্ধব এ ইউনিয়নে অবৈধ ভাবে গড়ে ওঠেছে ২১টি ইটভাটা। এটি পরিণত হয়েছে ইটভাটা গ্রামে। কৃষি জমিতে, লোকালয়ে, শিক্ষাপ্রতিষ্ঠানের পাশে, রাস্তার পাশে ও পাহাড়-বনাঞ্চলের পাশে গড়ে উঠেছে এসব অবৈধ ইটভাটা।

জানা গেছে, ২০১১ সালের পরিসংখ্যান অনুযায়ী চরম্বা ইউনিয়নের লোকসংখ্যা ২৫ হাজার ৬ শত ২৪ জন। এখন দাড়িঁয়েছে প্রায় ৩৫ হাজার। ৩৫ হাজার লোকজনের জনবসতি এলাকায় প্রতিদিন ২১টি ইটভাটার ধোঁয়া ও ধুলাবালির সাথে যুদ্ধ করে বেঁচে থাকতে হয়। সবচেয়ে বেশী শ্বাস রোগে ভোগে এ জনপদের বাসিন্দারা। প্রসূতি মা ও অনাগত শিশুর জীবনও পড়ছে হুমকির মূখে।

১২.৫৪ বর্গমাইলের এ জনপদে ২টি মাধ্যমিক বিদ্যালয়, ৩টি মাদ্রাসা ,১২টি প্রাথমিক বিদ্যালয়, ৮টিএবতেদিয়া মাদ্রাসা রয়েছে। সবচেয়ে বেশি রয়েছে ইটভাটা। ২১টি। প্রতিদিন শত শত মাটিবাহী ট্রাক চলাচল করে। রাস্তার পাশে ইটভাটার মাটির স্তুপ। ধুলাবালির সাথে যুদ্ধ করে শিক্ষার্থীরা বিদ্যালয়ে যাওয়া-আসা করে।

ইটভাটাগুলো জনবসতি এলাকা ও কৃষি জমির উপরে বছরের পর বছর ধরে অবাধে কার্যক্রম চালিয়ে যাচ্ছে। এমন কি ভাটার পার্শ্ববর্তী কৃষি ও বনভূমিতেও ব্যাপ্তি ছড়িয়ে আছে ইটভাটাগুলো। ইটভাটার মালিকগণ প্রভাবশালী হওয়ায় প্রতিবাদ করতে পারে না স্থানীয়রা।

উপজেলা সদর থেকে এ ইউনিয়নের দূরত্ব প্রায় ৭ কিলোমিটার। এ ইউনিয়নের দক্ষিণে পুটিবিলা ও কলাউজান ইউনিয়ন, পশ্চিমে কলাউজান ও পদুয়া ইউনিয়ন, উত্তরে পদুয়া ওববান্দরবান সদর উপজেলার টংকাবতী ইউনিয়ন এবং পূর্বে বান্দরবান সদর উপজেলার টংকাবতী ইউনিয়ন ও লামা উপজেলার সরই ইউনিয়ন অবস্থিত। যার কারণে অবাধে পার্বত্য অঞ্চল থেকে কাঠ সংগ্রহ করে ইটভাটা মালিকরা। এছাড়া চরম্বা ইউনিয়নে রয়েছে প্রচুর সরকারী বনাঞ্চল। এসব বনাঞ্চল থেকে বছরে ১০ লক্ষ মণ কাঠ পুড়ায় ইটভাটার মালিকরা। ইটভাটায় ইট পোড়াতে কাঠের ব্যবহার নিষিদ্ধ হলেও জ্বালানি হিসেবে অবাধে কাঠ ব্যবহার করা হচ্ছে।

সরেজমিনে গিয়ে দেখা যায়, চরম্বা মাইজবিলা ড. অলি আহমদ বীরবিক্রম উচ্চ বিদ্যালয় ঘেষে গড়ে ওঠেছে (এলবিএন) নামের ইটভাটা। ইটভাটার কালো ধোঁয়া ও ধুলাবালির কারণে বিদ্যালয়ের পরিবেশ নষ্ট হয়ে পড়েছে।

উপজেলা কৃষি অফিস সূত্রে জানা যায়, তিন ফসলি জমিতে ইটভাটা করার কোনো নিয়ম নেই। কৃষি জমির টপসয়েল নিয়ে গেলে প্রথম দুই বছর প্রায় ৭০ ভাগ ফসল কমে যায়। কৃষি জমির টপসয়েল চলে গেলে আগামী ৮/১০ বছরে জমির স্বাভাবিক অবস্থা ফিরে আসা কঠিন।

এ ব্যাপারে জানতে চাইলে চরম্বা ইউপি চেয়ারম্যান মাস্টার শফিকুর রহমান কোন মন্তব্য করতে রাজি হননি।

উপজেলা নির্বাহী অফিসার তৌছিফ আহমেদ সাংবাদিকদের বলেন, লোহাগাড়ায় ইটভাটাগুলো একদিনে গড়ে উঠেনি। এখানে অবৈধভাবে কোন ইটভাটা পরিচালিত হতে পারবে না।
অবৈধ ও অনুমোদনহীন ইটভাটার বিরুদ্ধে আইনগত ব্যবস্থা নেয়া হবে।

চরম্বা ইউনিয়নের উপর দিয়ে প্রবাহিত টর খাল, কর্মু খাল এবং জর খালে ইটভাটার বর্জ্যে পরিবেশ দূষিত হচ্ছে। স্থানীয় সচেতনমহল বলেন, এসব অবৈধ ইটভাটা প্রশাসন বন্ধ না করলে আদালতের আশ্রয় নেবেন।

Leave a Reply

Your email address will not be published. Required fields are marked *