ফারুক খান তুহিন
প্রকাশ: ২০২০-০৪-২৫ ২১:৩৬:৩৯ || আপডেট: ২০২০-০৪-২৫ ২১:৩৬:৪৩
বঙ্গোপসাগরে দুটি ট্রলারে অবরুদ্ধ হয়ে থাকা কয়েকশত রোহিঙ্গাকে কালবিলম্ব না করে উপকূলে আসার এবং খাদ্য, পানি ও স্বাস্থ্যসেবা পাওয়ার অনুমতি দিতে বাংলাদেশ সরকারের প্রতি আহ্বান জানিয়েছে মানবাধিকার বিষয়ক আন্তর্জাতিক সংগঠন হিউম্যান রাইটস ওয়াচ। সংগঠনটির পক্ষ থেকে নিজস্ব ওয়েবসাইটে এ বিষয়ে আজ একটি প্রতিবেদন প্রকাশ করা হয়েছে। তাতেই এমন আহ্বান জানানো হয়েছে। এতে বলা হয়, জাতিসংঘের শরণার্থী বিষয়ক এজেন্সি ইউএনএইচসিআর সতর্ক করেছে এই বলে যে, সমুদ্রে আটকে পড়া ওইসব রোহিঙ্গা হয়তো কয়েক সপ্তাহ ধরে পর্যাপ্ত খাদ্য ও পানি ছাড়া অবস্থান করছে। এ বিষয়ে ২৩ শে এপ্রিল বাংলাদেশের পররাষ্ট্রমন্ত্রী একে আবদুল মোমেন বলেছেন, আর রোহিঙ্গা প্রবেশ করতে দেবে না বাংলাদেশ। তার ভাষায়, আমি এসব রোহিঙ্গাকে বাংলাদেশে প্রবেশে অনুমতি দেয়ার বিরোধিতা করি। কারণ, সব সময়ই অন্য দেশের দায় কাঁধে নিতে বাংলাদেশের প্রতি আহ্বান জানানো হয়।
এরই মধ্যে মিয়ানমারে নৃশংসতা থেকে পালিয়ে আসা প্রায় ১০ লাখ রোহিঙ্গাকে আশ্রয় দিয়েছে বাংলাদেশ।
আবদুল মোমেন আরো বলেন, করোনা মহামারির কারণে দেশে ফেরা বাংলাদেশির সংখ্যা বৃদ্ধি পাওয়ার কারণে, ‘বিদেশী কোনো মানুষ বা শরণার্থীকে আশ্রয় দেয়ার মতো সুযোগ নেই আমাদের’।
হিউম্যান রাইটস ওয়াচের এশিয়া বিষয়ক পরিচালক ব্রাড এডামস বলেছেন, মিয়ানমারের সেনাবাহিনীর নৃশংসতার ফল হিসেবে বড় ভার কাঁধে নিয়েছে বাংলাদেশ। কিন্তু তাই বলে এটাকে অজুহাত হিসেবে ধরে বোটবোঝাই শরণার্থীদের সমুদ্রে ঠেলে দেয়া উচিত নয়, যেখানে তারা মারা যাবে। যারা এমন ভয়াবহ ঝুঁকিতে রয়েছেন তাদের জন্য অব্যাহত সহযোগিতা করা উচিত বাংলাদেশের। আর একই সঙ্গে সাম্প্রতিক বছরগুলোতে রোহিঙ্গাদের সহযোগিতা করে যে আন্তর্জাতিক সুনাম কুড়িয়েছে দেশটি তা অক্ষুন্ন রাখা উচিত।
হিউম্যান রাইটস ওয়াচ আরো বলেছে, এ অঞ্চলের দেশগুলো অমানবিকভাবে এসব বোটবোঝাই শরণার্থী ও আশ্রয়প্রার্থীদের পুশব্যাক করে তাদের জীবনকে ঝুঁকির দিকে ঠেলে দিয়েছে। সম্প্রতি একটি ট্রলারকে, হতে পারে একাধিক মাছধরা ট্রালারকে পুশব্যাক করেছে মালয়েশিয়া। এতে ছিলেন কয়েক শত রোহিঙ্গা আশ্রয়প্রার্থী। থাইল্যান্ডও ইঙ্গিত দিয়েছে তারা রোহিঙ্গাভর্তি বোট তাদের দেশে প্রবেশ করতে দেবে না।
১৫ই এপ্রিল বাংলাদেশ কোস্ট গার্ডের কর্মকর্তারা রোহিঙ্গা শরণার্থীভরা একটি বোট উদ্ধার করেন। ওই বোটটিকে প্রায় দু’মাস আগে ফেরত পাঠিয়েছিল মালয়েশিয়া। ওই বোটে অভুক্ত প্রায় ৩৯০ জন রোহিঙ্গাকে তীরে নিয়ে আসা হয়। এর মধ্যে বেশির ভাগেরই বয়স ২০ বছরের নিচে। বলা হয়েছে, তাদেরকে উদ্ধার করার আগে বোটেই প্রায় একশ জন মারা গিয়েছে।
১৪ বছর বয়সী একটি বালিকা মেডিসিনস সান ফ্রন্টিয়ার্সকে (এসএসএফ) বলেছে, অনেকের পা ফুলে গেছে। তারা প্যারালাইজড হয়ে গেছে। অনেকে মারা গেছেন। তাদেরকে সমুদ্রে ফেলে দেয়া হয়েছে। আমরা সমুদ্রে ভাসছিলাম। আর প্রতিদিন মানুষ মারা যাচ্ছিল। মনে হচ্ছে, আমাদেরকে দোযখ থেকে নিয়ে আসা হয়েছে। উদ্ধার করা এসব শরণার্থীকে দেখাশোনা করছেন এমএসএফের মেডিকেল টিমের একজন নেতা। তিনি বলেছেন, তাদের শরীরে শুধু চামড়া আর হাড় আছে। তাদের অনেকেই শুধু বেঁচে আছেন।
বাংলাদেশি একজন জেলে হিউম্যান রাইটস ওয়াচকে ২০ শে এপ্রিল বলেছেন, তিনি রোহিহঙ্গাভর্তি দুটি ট্রলার দেখতে পান উপকূলের দিকে ছুটে আসছে। এ সময় তিনি মাছধরা ট্রলারে অন্যদের সঙ্গে সমুদ্রে ছিলেন। একই দিনে স্থানীয় এক অধিবাসী ফেসবুকে একটি পোস্ট দেন। তাতে তিনি লিখেছেন, আবারো রোহিঙ্গাভর্তি ট্রলার এগিয়ে আসছে কক্সবাজারের বাহারছড়া ইউনিয়নের দিকে। তারা বাংলাদেশে প্রবেশের জন্য সমুদ্রে অপেক্ষায় আছে।
হিউম্যান রাইটস ওয়াচ লিখেছে, সমুদ্রে অবরুদ্ধ হয়ে পড়া এসব রোহিঙ্গার মধ্যে কিছু সংখ্যক থাকতে পারেন গত চার মাস ধরে বাংলাদেশের আশ্রয়শিবির থেকে পলাতক শরণার্থী। তাদের উদ্দেশ্য ছিল মালয়েশিয়ায় পৌঁছা। হিউম্যান রাইটস ওয়াচ অন্তত দশটি পরিবারের সঙ্গে কথা বলেছে। তারা জানিয়েছে, তাদের পরিবারের সদস্য আছেন, যারা আশ্রয়শিবির থেকে চলে গেছেন। তারপর তারা আর ফিরে আসেন নি অথবা তাদের পক্ষ থেকে কোনো বার্তাও পান নি। কেউ কেউ পাচারকারীদের খপ্পরে পড়ে থাকতে পারেন। কুতুপালংয়ের বর্ধিত আশ্রয়শিবিরের এক মা হিউম্যান রাইটস ওয়াচকে বলেছেন, প্রায় দুই মাস আগে আমার এক ছেলে ক্যাম্প ছেড়ে চলে গেছে। প্রায় ২০ দিন পরে আমি একটি ফোন পাই। তাতে বলা হয়, আমার ছেলে পাচারকারীরে খপ্পরে পড়েছে। তাদেরকে টাকা দিতে হবে। আমরা টাকা দিয়েছি। কিন্তু তারপর থেকে আর কোনো খবর জানতে পারিনি আমরা।