চট্টগ্রাম, , সোমবার, ২৯ এপ্রিল ২০২৪

এম মাঈন উদ্দিন মিরসরাই প্রতিনিধি

এখনো মায়ের পথ চেয়ে থাকে ৩ বছরের শিশু মাহি!

প্রকাশ: ২০২০-০৪-২৭ ২১:২৬:৪১ || আপডেট: ২০২০-০৪-২৭ ২১:২৭:২২

মিরসরাই প্রতিনিধি, বীর কন্ঠ :

৩ বছর শিশু আরাফাত হোসেন মাহি এখনো মা আসবে বলে অপেক্ষা করছে, শুধু সবাইকে জিজ্ঞেস করছে আমার আম্মু কখন আসবে? সবাই তাকে মিথ্যা সান্তনা দিচ্ছে। তার মা আর আসবেনা। কারণ সে বেঁচে নেই। মিরসরাইয়ের করেরহাট ইউনিয়ন অলিনগর গ্রামের গৃহবধু কুলসুমা আক্তারের ৩ বছরের শিশু আরাফাত হোসেন মাহি এতিম হয়েছে গত ৫ এপ্রিল। আবার সে হটাৎ বলে উঠে আমার আম্মুকে মেরে ফেলেছে। মারা যাওয়ার পর কেউ যে ফিরে আসেনা সেটি বুঝার বয়স হয়নি এই শিশুর।

এদিকে গৃহবধু কুলসুমা আক্তার মুন্নি আত্মহত্যা করেনি, তাকে শশুরবাড়ির লোকজন মিলে সুপরিকল্পিতভাবে হত্যা করেছে বলে দাবী করেছেন তার পরিবার। ঘটনার প্রায় ২৩দিন অবিবাহিত হলেও মামলার কোন অগ্রগতি নেই বলেও জানান মুন্নির ভাই ফিরোজ। এতে করে প্রকৃত ঘটনা ধামচাপা ও ঘটনার সাথে জড়িতরা পার পেয়ে যেতে পারেন বলে আশংকা করছেন তিনি।

জানা গেছে, গত ৫ এপ্রিল সন্ধ্যায় মিরসরাই উপজেলার জোরারগঞ্জ থানার করেরহাট ইউনিয়নের অলিনগর গ্রামের মোহাম্মদ সওদাগর বাড়ীর নিজকক্ষ থেকে তার ঝুলন্ত লাশ উদ্ধার করা হয়। মুন্নি ওই বাড়ীর কাতার প্রবাসী মুক্তার হোসেনের স্ত্রী। আরাফাত হোসেন মাহিন নামে তাদের ৩বছর বয়সী একটি শিশু সন্তান রয়েছে। ঘটনার পর শশুর বাড়ীর লোকজন আত্মহত্যা বলে ধামাচাপা দিতে চাইছে এবং প্রভাশালী একটি মহল এর সাথে জড়িত রয়েছে বলে অভিযোগ মুন্নির পরিবারের। ঘটনার পরদিন ৬ এপ্রিল মুন্নির বড়ভাই মোঃ ফিরোজ আহম্মদ বাদি হয়ে স্বামী প্রবাসী আক্তার হোসেন, শশুর নুরুল আলম, শাশুড়ি আনোয়ারা বেগম, ইমাম হোসেন মাসুদ, ফারহানা আক্তার ও সুমি আক্তারকে আসামী করে জোরারগঞ্জ থানায় একটি হত্যা মামলা দায়ের করেন।

মুন্নীর বড় ভাই ফিরোজ আহমেদ বলেন, ৫বছর আগে আমাদের দূর সম্পর্কের আত্মীয় মুক্তার হোসেনের সাথে আমার একমাত্র বোনের বিবাহ হয়। বিয়ের পর থেকে তাকে স্বামী, শশুর-শাশুড়ী, ভাসুরের স্ত্রী (জা) বিভিন্ন ভাবে শারিরীক ও মানসিক নির্যাতন করতো। গত ৫ এপ্রিল তাকে শশুরবাড়ীর লোকজন হত্যা করে ফ্যানের সাথে ঝুলিয়ে রাখে। ঘটনার পর পুলিশ একটি অপমৃত্যু মামলা দায়ের করেন। প্রথমে আমাদের পক্ষ থেকে মামলা নিতে আগ্রহী ছিলেন না। পরবর্তিতে আমি বাদি হয়ে একটি হত্যা মামলা দায়ের করেছি। কিন্তু ঘটনার প্রায় ২২-২৩ দিন অতিবাহিত হলেও এখনো মামলার দৃশ্যমান কোন অগ্রগতি চোখে পড়েনি। একজন মহিলা ছাড়া (মামলায় অভিযুক্ত নয়) সব আসামী এখন পলাতক রয়েছে বলে জানান তিনি।

ফিরোজ আহমেদ বলেন, বোনের সুখের জন্য বিয়ের পর থেকে এ পর্যন্ত প্রায় ১০ লাখ টাকার খরচ করেছি। কিন্তু সুখ তো দুরের কথা, শেষ পর্যন্ত একমাত্র আদরের বোনকে হারালাম। আমার একমাত্র ভাগিনা এতিম হয়ে গেলো।

তিনি বলেন, বিভিন্ন সময় আমার বোনের প্রবাসী স্বামী আক্তার হোসেকে নানান কথা বলে কান ভারি করতো শাশুড়ি এবং বড় জা । ওইদিন এসব বিষয় নিয়ে তাদের সাথে বাগবিতন্ডার এক পর্যায়ে শশুর, শাশুড়ি ভাসুর ও বড় জা মিলে বালিশ চাপা আমার বোনকে হত্যা করে। আত্মহত্যা বলে চালানোর জন্য কৌশলে তার মৃতদেহ ফ্যানের সাথে নিজেরা ঝুলিয়ে রাখে। স্বামীর প্ররোচনা রয়েছে আমার বোনকে খুন করার পেছনে। আমার বোনের ঘরের মধ্যে কোন চেয়ার বা টুল না থাকা স্বত্বে ও খাটের উপর ফ্যানের অধিক দূরত্ব নেই এমন স্থানে ফ্যানের একটি ডানায় ভর করে আত্মহত্যা নাটক সাজানো হয়েছে।

মুন্নির মামা নুরুল আলম বলেন, আমার ভাগনির ঘরের পাশের এক স্কুল পড়–য়া কিশোর নাতি নুর উদ্দিন ( ১২) ও বলেছিল আমি দেখেছি মুন্নী মামি যখন ফ্যানের ঝুলছিল তখন উনার হাটু খাটে ভাজ করা। ঘরের দরজার কোন হুক ভাঙ্গা ছিল না, পরে ভাঙ্গা হয়েছে পুলিশকে দেখানোর জন্য। এমন খবর পেয়ে পার্শ্বেই বাবার বাড়িতে খবর দেয়নি শ্বশুরের পরিবার। আগে পুলিশকে খবর দিয়েছে। আমরা যখন উপজেলা স্বাস্থ্য কমপ্লেক্সে নিয়ে যাই তখন দায়িত্বরত চিকিৎসক ডাঃ অমিত দে মুন্নীকে মৃত ঘোষনা করেন।

এই বিষয়ে ডা. অমিত বলেন, মুন্নির গলায় একটি ঝুলে থাকার দাগ ছিল, তবে তা অতোটা গভীর দাগ নয়। তিনি এই দাগে নিশ্চিত করে বলতে পারছেন না এটি হত্যা না আত্মহত্যা। প্রকৃত ঘটনা পোষ্টমর্টেম রিপোর্টেই প্রমানিত হবে বলে তিনি জানান।

এই বিষয়ে ঘটনার তদন্তকারী কর্মকর্তা জোরারগঞ্জ থানার এসআই নিবাস কুমার ভট্রাচার্য বলেন, আমি গত ৯ এপিল ঘটনার তদন্তে ওই বাড়িতে গিয়েছিলাম। নানা আলামত সংগ্রহ করেছি, লাশের ময়নাতদন্ত রির্পোটের অপেক্ষায় রয়েছি।

এই বিষয়ে জোরারগঞ্জ থানার ওসি মফিজ উদ্দিন ভূঞা পিপিএম বলেন, মামলার কোন অগ্রগতি হয়নি বলে যে অভিযোগ করা হয়ে তা সঠিক নয়। মুন্নির পরিবারের সকল অভিযোগ অবশ্যই তদন্ত সাপেে খতিয়ে দেখা হচ্ছে। তবে লাশের ময়না তদন্ত রিপোর্ট আসা পর্যন্ত আমাদের অপেক্ষা করতে হবে। এই ঘটনায় পুলিশের পর থেকে ন্যায় বিচারের সকল সহযোগিতা করা হবে বলেও জানান তিনি।

Leave a Reply

Your email address will not be published. Required fields are marked *