চট্টগ্রাম, , শুক্রবার, ২৬ এপ্রিল ২০২৪

ফারুক খান তুহিন

নানা সংকটে পাহাড়ি সীমান্তের ১৭ সাংবাদিক

প্রকাশ: ২০২০-০৫-০৬ ০৯:৫৪:৪৭ || আপডেট: ২০২০-০৫-০৬ ১০:০২:২৭

মোঃ জয়নাল আবেদীন টুক্কু, নাইক্ষ্যংছড়ি প্রতিনিধি, বীর কন্ঠ :

দেশের পূর্ব সীমান্তের পাহাড়ি জনপদ বান্দরবানের নাইক্ষ্যংছড়ি উপজেলার ১৭ সাংবাদিক নানা সংকটে দিন কাটাচ্ছেন। নিম্ন মধ্যবিত্ত সংখ্যাধিক্য এলাকা হিসেবে এ উপজেলার বিগত ৩ দশক আগে মাঠ- সাংবাদিকদের তৎপরতা শুরু হয়ে অদ্যবধি নিরলসভাবে কাজ করছেন তারা। তাদের সামনে অনেক বিপদ। তবু হাল না ছেড়ে রাষ্ট্রের কল্যাণে মনোযোগী তারা।

তারই ধারাবাহিকতায় করোনা মহামারির এ সময়েও তাদের সেই পুরোনো চেহারা। মারাত্মক ঝুঁকি নিয়ে তারা মাঠে চষে বেড়াচ্ছে সরকারী নানা সিদ্ধান্ত-ত্রাণ বিতরণ,সীমান্ত সমস্যা,উন্নয়ন,পাহাড় কাটা ও পরিবেশের নানা বিষয় সহ যাবতীয় বিষয়ের স্পট নিউজ অথবা অনুসন্ধানী সংবাদ সংগ্রহের কাজে। কিন্তু এ বিপদে তাদের পাশে নেই কেউ।

অনুসন্ধানে জানা যায়, ১৭ সাংবাদিকের একজন আবুল শাহমা। র্দীঘ দিন এ পেশায় নিয়োজিত। নানা চড়াই-উৎরাই পেরিয়ে জীবন পার করলেও এক মূর্হুতের জন্যেও পেশা ছাড়েননি তিনি। কষ্টের মাঝেও সমস্যামান মানুষের পাশে দাড়িয়ে রাষ্ট্রের একজন সুনাগরিকের দায়িত্ব পালনে সচেষ্ট পঞ্চাশোর্ধ এ সাংবাদিক।

বর্তমানে নানা সংকটে রয়েছে এ সাংবাদিকের পথচলা। এর আগেও এধরনের সংকট কাটাতে অন্য একাধিক পেশাকে সহায়ক পেশা হিসেবে নিলেও বর্তমানে লকডাউনের কারণে তা সম্পূর্ণ ব্যতিক্রম। বর্তমানে তার জীবন অচল তবে সংবাদের বেলায় সচল।

অপর সাংবাদিক জয়নাল আবেদীন। তিনিও মাঠ সাংবাদিকতায় দক্ষ। কিন্তু সাংবাদিকতাকে ধরে রাখতে তিনি অন্য কয়েকটি পেশা গ্রহন করলেও বর্তমান লকডাউনে তার দশাও আবুল শাহমার মতো।

ক্ষুরধার সাংবাদিক মুফিজুর রহমান,মো: ইউনুছ ও মুহাম্মদুল হক বাহাদুর সহ নাইক্ষ্যংছড়ি প্রেস ক্লাবের প্রায় সাংবাদিক আবুল শাহমা ও জয়নালের মতো ঝুঁকি ও কষ্টে দিন কাটাচ্ছন। বিপদ কালে তাদের কোন উপকরণ নেই। বর্তমান সময়ে যারা ত্রাণ দিচ্ছেন তারা পিপিই,গ্লাভস,মাস্ক ইত্যাদি পরিধান করে থাকেন । আর সাংবাদিকদের এ সব নেই।

নাম প্রকাশে অনিচ্ছুক একাধিক সাংবাদিক বলেন,প্রেস ক্লাবের ১৭ সাংবাদিক নানা সংকটে জীবন কাটাচ্ছেন বর্তমানে। বর্তমান করোনা সংকটের সময়ে পারিবারিক সমস্যার মাঝেও তাদের পাশে এ পর্যন্ত কেউ এগিয়ে আসে নি। এক তো সীমান্ত এলাকা। পক্ষান্তরে জীবনবাজী রেখে সংবাদ সংগ্রহ করা চলে এ সব সাংবাদিককে। এর উপর পাহাড়ি এলাকা। পাশাপাশি উপজেলা সদরের সাথে বিচ্ছিন্ন প্রতিটি ইউনিয়ন।

বাইশারী,দৌছড়ি,ঘুমধুম ও সোনাইছড়ি সম্পূর্ণ আলাদা-ভৌগলিকভাবে । বিচ্ছিন্নভাবে একেকটির দূরত্ব ১৫/২০ কিলোমিটার। সীমান্ত,পাহাড়,নিম্ন মধ্যবিত্ত জীবনমান ও বিচ্ছিন্ন জনপদ নিয়ে উপজেলার সাংবাদিকরা থেমে থাকেননি তাদের দায়িত্ব পালনে। তারা বলেন,জেলার মোট ৮ করোনা আক্রান্তের মধ্যে এ উপজেলায় এককভাবে ৫ জন । বাকী ৩ জন বান্দরবানের ৬ উপজেলায়।

এ থেকে প্রমানিত এ উপজেলা নানাভাবে বিপজ্জনক অবস্থানে। আর তারা দেশের প্রতিটি সংকটময় মূর্হুতে তাদের দায়িত্ব পালন করে আসছেন জীবন বাজি রেখে । বিশেষ করে বর্তমান করোনা সংকট ভয়াবহ রূপ নিলেও নাই নাই অবস্থায় তারা মাঠে আছে রাত-দিন। বর্তমানে তারা নিউজ কালেকশন করছেন পিপিই ছাড়া। তাদের কারো পরিবেশ সম্মত মাস্ক নেই, গ্লাভস নেই।এর মধ্যে সংবাদ সংগ্রহ যে কতো বিপদজনক হয়তো বিপদ আসলেই তারা বুঝবে। ক্লাবের প্রধান উপদেষ্টা সিনিয়র সাংবাদিক মাঈনুদিন খালেদ জানান,প্রধানমন্ত্রী দেশরত্ন শেখ হাসিনা ও তথ্যমন্ত্রী সহ রাষ্ট্রের নীতি নির্ধারকরা গণমাধ্যম কর্মিদের জন্যে প্রণোদনার ঘোষণা দিলেও এ উপজেলার মাঠে থাকা সাংবাদিকরা কোন সুযোগ-সুবিধা পান নি এ পর্যন্ত। সবাই বর্তমানে নানা সংকটে। যেমন পিপিই সংকট,র্অথ সংকট সহ নানা মুখি সংকটে মানবেতর জীবন কাটাচ্ছে তারা।

এ বিষয়ে নাইক্ষ্যংছড়ি উপজেলা চেয়ারম্যান ও উপজেলা আওয়ামী লীগ সভাপতি অধ্যাপক আলহাজ্ব মো: শফিউল্লাহ বলেন,আসলে এই উপজেলার সাংবাদিকরা সুবিধা বঞ্চিত। নাইক্ষ্যংছড়ির ৩০ বছরের ইতিহাসে তারা রাষ্ট্রের তেমন কোন সুবিধা না পেলেও বর্তমান সরকারের আমলে ক্লাবের জন্যে ভবন পেয়েছেন। আরো পাচ্ছেন। তবে ক্লাবের জন্যে। ব্যক্তির নয়। আর এ কারণে তিনি নিজে বান্দরবান জেলা পরিষদ চেয়ারম্যানের সাথে আলোচনা করেছেন এ বিষয়ে। তিনি আশা করছেন কিছু একটা হবে।

তবে উপজেলা নির্বাহী অফিসার সাদিয়া আফরিন কচি বললেন ভিন্ন কথা। তিনি বলেন, সাংবাদিকদের বিষয়ে সরকারের কাছ থেকে কিছুই বলা হয়নি। তবুও উপজেলা চেয়ারম্যান ও উপজেলা কমিটির সাথে আলোচনা করে কী করা যায় দেখবেন বলে জানান উপজেলার এ অভিভাবক।

Leave a Reply

Your email address will not be published. Required fields are marked *