চট্টগ্রাম, , মঙ্গলবার, ১৬ এপ্রিল ২০২৪

admin

গীতিকার হওয়ার স্বপ্ন নিয়ে অডিও প্রতিষ্টানে চাকরী নেন বেলাল উদ্দীন হৃদয়

প্রকাশ: ২০২১-০৮-০৪ ২১:১৪:৩৩ || আপডেট: ২০২১-০৮-০৪ ২১:১৮:৫৭

ম. ক. হামিদ| গানের প্রতি ভালবাসা। গান নিয়ে আকাশ ছোঁয়ার স্বপ্ন। সেই স্বপ্নের পথ ধরেই হাঁটছেন। হৃদয়ে ধারন করেছেন গান আর গান। দেশের নামকরা একজন গীতিকার হওয়ার স্বপ্ন নিয়ে অডিও প্রযোজনা প্রতিষ্টান “বিনিময় ক্যাসেট বাজার” এ চাকরী নেন। গান শুনেন, গান লিখেন। নিজের লেখা গান কাউকে দেখানোর সাহস পান না। তবে লেখালেখি ছাড়ছেন না। ১৯৯৬ সালের কথা। অডিও বাজার গরম ছিলো তখন। শিল্পীদের কদরও ছিলো বেশ। বলছিলাম, চট্টগ্রামের লোহাগাড়া উপজেলার দরবেশহাট সওদাগর পাড়ায় জন্ম নেওয়া গীতিকার বেলাল উদ্দিন হৃদয়ের কথা।

বাবা মনির আহমদের মৃত্যুতে পড়া-লেখা বেশীদূর আগাতে পারেনি। অল্প বয়সে শুরু হয় কর্মজীবন তার। অবসরে পত্রিকার বিনোদনের পাতায় খ্যাতিমান সংগীত ব্যাক্তিত্বদের নিয়ে লেখা গুলো পড়তেন প্রতিদিনই, ধীরে ধীরে প্রবল ইচ্ছেশক্তি দিয়ে লিখে যান গানের কথামালা। সাহস করে কোন একদিন প্রখ্যাত সংগীত শিল্পী জানে আলমকে নিজের লেখা গানের পান্ডুলিপি দেখান। লেখা গুলো পড়ে তিনি খুব প্রশংসা করেন
আর বলেন, চট্টগ্রামের কথা ও সুরের যাদুকর আব্দুল গফুর হালীর ছায়াতলে থাকতে।

বেলাল উদ্দিন হৃদয় ব্যাপক উৎসাহ ও উদ্দীপনা নিয়ে শব্দের পর শব্দ লিখে যাচ্ছেন। ১৯৯৯ সালে ইকবাল নামের এক শিল্পীর সাথে তার বন্ধুত্ব হয়। আব্দুল গফুর হালীর তত্বাবধানে ইকবালের একটি ভান্ডারী গানের এ্যালবামের কাজ চলছে। ওই এ্যালবামের জন্য দু’টি গান লিখেন বেলাল উদ্দিন হৃদয়। ওই দু’টি গানই পছন্দ করেন আব্দুল গফুর হালী। ওই এ্যালবামে জায়গা দখল করে নিলো গান দু’টো।

সে থেকে বেলাল উদ্দিন হৃদয়ের সাথে আব্দুল গফুর হালীর গভীর সম্পর্কের সূচনা হয়। আর পেছনে থাকাতে হয়নি বেলাল উদ্দিন হৃদয়কে। স্বপ্ন ছুঁইতে থাকে একের পর এক। আব্দুল গফুর হালী সুযোগ করে দেন দেশের নামকরা শিল্পীদের এ্যালবামে গান দেওয়ার।

বেলাল উদ্দিন হৃদয়ের লেখা ভান্ডারী, বিচ্ছেদ, আঞ্চলিক, আধুনিক, ফোক ও ইসলামী গানসহ প্রায় আট শতাধিক গান বাজারে রয়েছে একক ও মিক্স এ্যালবামে। এসব গান রয়েছে বিভিন্ন অডিও, ভিডিও ক্যাসেট, প্রযোজনা প্রতিষ্টান ও ইউটিউব চ্যানেলে। আরও অন্তত পাঁচ’শরও অধিক গান রয়েছে অপ্রকাশীত। এমনটা জানিয়েছেন বেলাল উদ্দিন হৃদয়।

অসংখ্য শিল্পী তার লেখা গানে কন্ঠ দিয়েছেন, তাদের মধ্যে উল্লেখযোগ্য, প্রয়াত সেলিম নিজামী, শিমুল শীল, ইকবাল, শাহজান আলী, ছোট কাসেম, পরদেশী রুবেল
আহম্মদ নুর আমিরী, এরফান, আক্তার আজাদ, কাইয়ুম (কোলকাতা), মৃদুল শীল, আজম শাহ, মুন, মুবিন, মৌসুমি, পান্না, মুন্নি চৌধুরী, রিমা চৌধুরী, রুমি,
নয়ন মনি, প্রিয়া মনি, জনি, লালন, এফ এ নয়ন, সুস্মিতা, হেলাল, রমজান আলী প্রেম, আজাদ জিকু
শান্তা ভৌমিক, হীরা, রুপা, জাহাঙ্গীর, এস্তফা, পারভেজ, সোনিয়া, মেরী, শিউলী, সালমা, লাভলী, জসিম, রুপসী, শাহীন, পুষ্পাসহ আরো অনেকে।

“ইশ বন্ধু” ঈশারাতে”মাতাল” | “আমি পাইলামনা “রসিয়া” হিয়ার গহীনে “| “আর কতো রাত”শুভকামনা ” রঙ্গীলা”| “শোনরে সাথী” |
বেলাল উদ্দিন হৃদয়ের লেখা শিল্পী মেরীর কণ্ঠে গাওয়া এ গানগুলো নেট দুনিয়ায় ভাইরাল হয়। রাতারাতি দর্শকপ্রিয় হয় গানগুলো।

সম্প্রতি বাংলাদেশের রাজকুমারী খ্যাত শিল্পী পলি শারমিন গেয়েছেন বেলাল উদ্দিন হৃদয়ের কথা ও সুরে
একটি মায়ের গান। “মায়ের পায়ের নিচে সন্তানের বেহেস্থ” শিরোনামে গানটি মোহনা টেলিভিশনে লাইভ অনুষ্ঠানে প্রচার হয়। ব্যাপক প্রশংসা কুড়িয়েছে গানটি।

“প্রেমের নেশা ” ও “চুপিচুপি প্রেম” শিরোনামে গান দু’টো চট্টগ্রামের জনপ্রিয় শিল্পী জুলি’র কণ্ঠে বেশ সাড়া ফেলেছে দর্শকদের মাঝে।

বেলাল উদ্দিন হৃদয়ের কথা ও সুরে কণ্ঠশিল্পী শামান্তা শাহীনের গাওয়া “আঁই চাঁটগাইয়া বনফুল” গানটি ইতোমধ্যে মানুষের মনে জায়গা করে নিতে সক্ষম হয়েছে। ঢাকার দর্শকরা বেশ উপভোগ করছেন গানটি।
কণ্ঠশিল্পী শামান্তা বলেন, বেলাল ভাই প্রতিভাবান একজন গীতিকার। তার লেখা আমার গাওয়া গানটি ঢাকায় জনপ্রিয়তা পেয়েছে। মঞ্চে গাইতে গেলেই গানটি গাওয়ার অনুরোধ পায়।

বেলাল উদ্দিন হৃদয় বলেন, সাংস্কৃতিক বিমুখ এলাকা হওয়ায় নিজেকে গানের মানুষ হিসেবে পরিচয় দিতে সংকোচ বোধ করতাম। নিজেকে লুকিয়ে রাখার চেষ্টা করতাম সব সময়। একযুগ আগে সাংবাদিক কাইছার হামিদ ভাই পত্রিকায় আমাকে নিয়ে লিখেন। তখন থেকে দেশের মানুষের কাছে গীতিকার হিসেবে আমি পরিচিতি লাভ করি। এরপর বিভিন্ন সময় বিভিন্ন পত্রিকায় সাংবাদিক বন্ধুরা আমাকে নিয়ে লেখালেখি করেন।

প্রাপ্তির কথা জানতে চাইলে বেলাল উদ্দিন হৃদয় বলেন, দীর্ঘ দুই যুগেরও বেশী সময় ধরে সংগীত জীবনে প্রাপ্তি তেমন কিছুই নেই। অর্থ বিত্ববান হবার লোভ কখনো কাজ করেনি মাথায়, শুধু সাংস্কৃতিক বিমুখ অন্ধকার সমাজে নিজেকে একজন আলোকিত মানুষ হিসেবে গড়ে তোলার ইচ্ছেটা ছিলো প্রবল। তাই গানকে ভালোবসে একজন সৃজনশীল প্রতিষ্টিত গীতিকার হবার স্বপ্ন দেখেছিলাম, কিন্তুু তা আর হলোনা, গীতিকার হিসেবে পরিচিত হতে না হতেই মেমোরি কার্ড এসে সব স্বপ্ন আশা ভেঙ্গে তছনছ করে দেয়। সংগীতাঙ্গনে নেমে আসে চরম ধস। বিলুপ্ত হতে থাকে বড় বড় প্রতিষ্টান গুলো। তারপর ইউটিউব আসাতে এখন আবার ভালো ভালো গান হচ্ছে। তবে আগের সেই আনন্দ অনুভুতি আর নেই।

আব্দুল গফুর হালীর পরে আর কেউ তেমন গান লিখছেন না চট্টগ্রামে। অনেকেই মনে করেন গফুর হালীর পরে বেলালের লেখা গানই দখল করে নিয়েছে দর্শকের মন। চট্টগ্রাম আকাশে বাতাসে ভেসে বেড়াচ্ছে তার লেখা গান। নবীন-প্রবীন শিল্পীরা তার মৌলিক গান সংগ্রহ করছেন। প্রকাশের অপেক্ষায় প্রায় শতাধিক গান। বেলাল উদ্দিন হৃদয়ের লেখা জনপ্রিয় গানগুলো হলো-

♪প্রয়াত সেলিম নিজামীর গাওয়া
“বন্ধুরে তুই কেমন করে হইলিরে এতো পাষান, ভুল বুঝিয়া বুকটা আমার করলিরে শ্মশান” |
♪শিমুল শীলের গাওয়া
“কি প্রেমে মজাইলা মায়াতে জড়াইলা, রহিতে না পারি ভুলিয়া” |
“আমার প্রতি বিমুখ হইলা কেনে, তোমার কি মন ঘামেনা জল দেখিলে নয়নে” |
♪শাহজাহান আলীর গাওয়া
“আরে ও আশেকী গনরে, আল্লাহর অলির দরবারে, কে যাবি চল ভক্তি লইয়া অন্তরে”|
♪ ছৈয়দ এরফানের গাওয়া
“আমার এই মন উতলা এখন প্রেমের নেশায়, ধরেছে
মুর্শিদ বাঁচা বাবা পাগল করেছে”|
♪ মৃদুল শীলের গাওয়া
“আধা রাইতে বিষের বাঁশি কে বাজায়,পরান ধর পরায়”|
♪আজম শাহর গাওয়া
“আমার চিত্তে দিয়া চিতার অনল বন্ধুরে তুই কি সুখ পাস, নাকি আমি মরি বন্ধু এই টুকুই তুই চাস” |
♪আজাদ জিকুর গাওয়া
“আমার জীবন কেন এমন ওগো বিধি বলো মোরে,
সুখের আশায় নয়ন ভাসাই দুঃখের অনল হৃদয় পোড়ে”|
♪মুন ও মুবিনের গাওয়া
“চলছাতুরী নগইজ্য তুঁই দেওয়াইল্যা বানাই, প্রেমর দোহাই দি হইর প্রেমর দোহাই”|
♪ মুনের গাওয়া
“আমার আষ্টেপৃষ্টে সকল সৃষ্টে তোমার দয়া খানি, ছায়ার মতো অবিরত মিশে থাকে জানি” |
“জীবন নামের রেল গাড়ীটার দুই দিকে
দুই ষ্টেশন, দোলনা থেকে করে শুরু খাঁটিয়াতে সমাপন” |
♪ পলি শারমিনের গাওয়া
“মায়ের পায়ের নিচে সন্তানের বেহেশত, আল্লাহর দেয়া অশেষ এক নেয়ামত মা, মায়ের মনে কষ্ট দিওনা” |
♪ শামান্তা শাহীনের গাওয়া
“আঁই চাঁটগাইয়া বনফুল রে চাঁটগাইয়া বনফুল, সুভাস লইত হত ভ্রমর হয় যে আকুল, অয়রে আকুল”|
♪জুলির গাওয়া
“যৌবনে লাগে দোলা মৌবনে ফুল ফুটেরে, যখনই বন্ধু আমার মুছকি হেসে ওঠেরে” |
♪মেরীর গাওয়া
“ইশ বন্ধু ইশ তোকে করছি ভীষন মিস, ফিরে আয় ফিরে আয় এতো কষ্ট কেন দিস”|
♪শিউলীর গাওয়া
“লেনা দেনা না হয় যদি দুই হৃদয়ের মাঝে, এতো কথা এতো মায়া আসিবে কোন কাজে” |
♪হীরার গাওয়া
“বেঈমান যদি বলি তোরে সেও হবে কম রে বন্ধু সেও হবে কম, মরুভূমি করলিরে তুই কৃষ্ণচুড়ার বন”|
♪এফ এ নয়ন ও সোনিয়ার গাওয়া
“ও আমার গোলাপজান খাওয়াইয়া মিষ্টি পান, দিবি তোর অন্তরেতে ঠাই ” |
“ও সুন্দরী কোনদিন আমি ভাবিনাই” |

বেলাল উদ্দিন হৃদয়ের লেখা “কেমন করে পারলি তোরা মারতে এমন করে, জাতির জনক বঙ্গবন্ধু শেখ মুজিবেরে” এমন শিরোনামের গানটি দক্ষিন চট্টগ্রামে বেশ জনপ্রিয়তা লাভ করে। শিক্ষা প্রতিষ্টান ও সরকারী অনুষ্টানে স্থানীয় শিল্পীরা গেয়ে যান। এই গানটি প্রথম কণ্ঠ দিয়েছিলেন তৎকালিন লোহাগাড়া উপজেলা নির্বাহী অফিসার ফিজনূর রহমান। সে থেকে গানটি এতদাঞ্চলে বেশ জনপ্রিয়।

Leave a Reply

Your email address will not be published. Required fields are marked *